২১ নভেম্বর বিশ্ব সিওপিডি দিবস
সিওপিডি প্রতিরোধযোগ্য
ডাঃ হুমায়ুন কবীর
বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ
দুর্গাপুর মিশন হসপিটাল
সি ও পি ডি কি
ফুসফুসের
প্রদাহ জনিত রোগ সিওপিডি (ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ), যা ফুসফুসের
শ্বাসনালী ও অ্যালভিওলাইকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এবং যার ফলে ফুসফুসের কর্ম ক্ষমতা
ধীরে ধীরে কমতে থাকে। শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হল এই রোগের প্রধান দুটি উপসর্গ।
কোন বয়সে
এই রোগের
প্রবণতা সবচেয়ে বেশি হয় বার্ধক্যে অর্থাৎ ষাট বছরের উর্দ্ধে। সাধারণত এই রোগ চল্লিশ
বছর বয়সের কমে হয় না। তবে কিছু জিন গত সমস্যার কারণে এই রোগের বহিঃপ্রকাশ খুব
অল্প বয়সেও হতে পারে।
কাদের বেশি হয়
সাধারণত
পুরুষরাই এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। তবে এটা নির্ভর করে পরিবেশ দূষণের মাত্রার
উপর অর্থাৎ যেসব এলাকার পরিবেশ দূষণ (কলকারখানা, ধোঁয়া) এর মাত্রা বেশী হয়,
সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যেই এই রোগের মাত্রা বেশী হয়। উল্লেখ্য যেসব গ্রামীন
মহিলারা কাঠ, কয়লার উনুন এ রান্না করেন তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশী হতে দেখা যায়।
কারণ
* ধূমপান
হল এর অন্যতম প্রধান কারণ।
* কলকারখানা,
গাড়ির ধোঁয়া, জীবাশ্ম জ্বালানী(কাঠ, কয়লা) র ব্যবহার।
* ছোট
বেলায় ঘন ঘন ফুসফুসে সংক্রমন।
* তাছাড়া
কিছু জিনগত কারণেও এই রোগ হতে পারে।
রোগের লক্ষণ
· এই রোগের প্রধান লক্ষণ
হল শ্বাসকষ্ট এবং কাশি।
· সাথে কফ, বুকের মধ্যে চাপ
ভাব এবং বুকে ‘সাই সাই’ আওয়াজ হওয়া।
শ্বাসকষ্ট পরিশ্রম করলে
বাড়ে আবার বিশ্রাম নিলে তা তৎক্ষনাত কমে যায়। 
· তাছাড়া পা-ফোলা, বুকে
ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, ওজন হ্রাস হতে পারে।
· এইসব রোগীদের টিবি ও
ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা প্রবল।
না করালে জটিলতা
চিকিৎসা না করলে ফুসফুসের কর্মদক্ষতা দ্রুতহারে হ্রাস পায়।
শ্বাসকষ্ট কাশির তীব্রতা খুব বেড়ে যায়। সাধারণ সর্দি কাশি এই সব রোগীদের ক্ষেত্রে
প্রাণঘাতি হয়ে দাঁড়ায়।
অ্যাজমার ও সিওপিডি
সাধারণত
ছোটবেলা থেকে শুরু হয় অ্যাজমা। এতে সাধারণত একটা ট্রিজারিং
ফ্যাক্টর থাকে (ধুলো, ধোঁয়া, ঠান্ডা লাগা, অ্যালার্জি) এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে
সাথে এই রোগের উপসর্গ মাত্রা পরিবর্তন হতে থাকে। এতে রোগীর সর্দি, গা হাত
পা চুলকানির প্রবণতা হতে দেখা যায়। অবশ্য এই দুটি রোগ একসাথে থাকতে পারে যাকে
ওভারল্যাপ সিন্ডোম বলে।
প্রয়োজন যখন সাবধানতা
এইসব রোগীর ফুসফুসের ক্ষমতা খুব কম থাকে। তাই ঘন ঘন ঠান্ডা
লাগানো মারাত্মক হতে পারে। ধূমপান বর্জন করা, বায়ু দূষণ থেকে নিজেকে বাচিয়ে চলা (মাক্স
ব্যবহার)। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোকক্কাস টিকা নেওয়া ও খাবার ঠিকঠাক (প্রোটিন,
ক্যালসিয়াম যুক্ত) খাওয়া। এবং রোগী বিশেষে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হতে পারে।
ফুসফুস ছাড়া আক্রান্ত হয়
ফুসফুস
ছাড়াও এই রোগে হৃদরোগ (ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ, কর পালমোনেলী ইত্যাদি) হবার
সম্ভাবনা প্রবল। তাছাড়া হাড়ের ক্ষয়, মাংসপেশী দুর্বলতা, ক্যান্সারও হতে
পারে। উল্লেখ্য যে এই রোগীরা মানসিক ডিপ্রেসন বা অ্যাংজাইটির শিকার হয়ে থাকে।
প্রতিরোধযোগ্য
অবশ্যই এটা
প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান বর্জন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ, জীবাশ্ম জ্বালানী
ব্যবহার বর্জন হল এর প্রধান পদক্ষেপ। বাচ্চাদের সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা এবং
অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করা হলে ভবিষ্যতে এই রোগের প্রবণতা কমে যায়।
যখন উপসর্গগুলি বাড়ে
ফুসফুসে
ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন, পরিবেশ দূষণ, তাপমাত্রা আদ্রতার তারতম্য, রোগের
উপসর্গগুলি বাড়িয়ে তোলে । এর ফলে শ্বাসকষ্ট এবং কাশির পরিমান বেড়ে যেতে পারে।
পরীক্ষা নিরীক্ষা
যোগাযোগ-৭৯০৮০৭৭৬৯৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন