১৪ ই জুন
বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
রক্তদান জীবনদান
অপূর্ব ঘোষ
সাধারণ সম্পাদক
পশ্চিমবঙ্গ ভলাল্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম
প্রশ্নঃ রক্তদানের অপর নাম জীবনদান। তা সত্বে আজও বহু লোকের
রক্তদানে অনীহা কেন?-এবিষয়ে আপনার মন্তব্য।
উত্তরঃ মানুষের রক্তদান
সম্বন্ধে সচেতনতার অভাব, রক্তবিজ্ঞান সমন্ধে অজ্ঞতার কারণেই আজও বহু মানুষের
রক্তদানে অনীহা। ভারতবর্ষের ১৩০ কোটি মানুষের জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ ইউনিট রক্ত বা
রক্তজাত উপাদানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিছুতেই আমরা লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে যেতে
পারছি না। তার কারণ নতুন রক্তদাতা তৈরী করার ক্ষেত্রে জাতীয়স্তরে ও রাজ্যস্তরের
সেরকম কোন ভূমিকা না থাকা। ফলে নতুন প্রজন্মকে সেভাবে রক্তদান সমন্ধে উদ্ভুদ্ধ
করা যাচ্ছে না।
পরিবেশ দূষণ ও উষ্ণায়নের
ফলে মানুষের হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এত বেশি পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে যে প্রতিবছরই ঐসব
রক্তদাতাদের রক্তদান থেকে সরে যেতে হচ্ছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সেভাবে নতুনরা
আর এগিয়ে আসছে না। ফলে রক্তের ঘাটতিটা রয়েই যাচ্ছে।
প্রশ্নঃ কত বছর থেকে রক্তদান করা যেতে পারে।
উত্তরঃ ১৮ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত রক্তদান করা যেতে পারে।
প্রশ্নঃ রক্তদানের জন্য সর্বনিম্ন ওজন কত হওয়া উচিত?
উত্তরঃ ৪৫
কেজি।
প্রশ্নঃ রক্তদানের কতদিন পর পূণরায় রক্তদান করা যায়?
উত্তরঃ তিনমাস।
প্রশ্নঃ কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তদান করা যায় না?
উত্তরঃ এইচ আই ভি,
হেপাটাইটিস বি, সি থাকলে জীবনে রক্তদান করতে পারবে না।
এছাড়া কুকুর কামড়ানোর
ভ্যাক্সিন বা ঐ ধরনের ভ্যাক্সিন নিলে তিনমাস থেকে ৬ মাস রক্তদান করা যাবে না।
প্রশ্নঃ রক্তদানের সময় কি কোন ব্যথা লাগে?
উত্তরঃ
পিঁপড়ে কামড়ানোর মত একটু ব্যথা অনুভূত হয়। তবে আমরা বলি, রক্তদানে তিনবার ব্যথা
লাগে। একবার রক্তদানের আগে যে অনুভূতি হয় যে আমার ব্যথা লাগবে সেটা। দেওয়ার সময়
একটু লাগে। দেওয়া পর আনন্দ লাগে। তার কারণ রক্তদান করলে একটা রক্তদানের মাধ্যমে
কমপক্ষে তিনটে মানুষকে বাঁচানো যায়। ফলে এই আনন্দের ব্যাপারটা থাকেই। তবে এখন
অত্যন্ত আধুনিক এবং উচ্চমানের সূচ ব্যবহার করা হয়। ফলে সেই ভাবে এখন ব্যথা বোঝা
যায় না।
উত্তরঃ ১০০
শতাংশ ক্ষেত্রে রক্তদান সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে যদি তিনি অসুস্থ না হন।
তবে এটাও
সত্যি সবাই রক্তদান করতে পারে না। যাদের ক্রনিক কোন অসুখ বা কোন সমস্যা আছে,
ধারাবাহিক ভাবে যারা ওষুধ খায়, তাদের রক্তদান করা উচিত নয়। তবে শরীর সুস্থ থাকলে
রক্তদানে কোন ক্ষতি নেই।
প্রশ্নঃ রক্তদানে কি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
উত্তরঃ না। বরং রক্তদান
করলে হার্টের রোগ, হাইপারটেনশন, কোলেষ্টরল কমে যায়। রক্ত দিলে যে শুধু মানুষকে
সাহায্য করা হয় তা নয়। নিজের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কোন ক্ষতি তো নেই বরং
উপকার আছে।
প্রশ্নঃ ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবেটিস রোগীরা কি রক্তদান করতে পারে?
উত্তরঃ না। ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবেটিস এ যারা দৈনিক
ওষুধ খায় তারা রক্তদান করতে পারবে না। থাইরয়েড থাকলেও রক্তদান করা যায় না।
প্রশ্নঃ দেশে কত ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে
উত্তরঃ দেশে ৩১০০টি ব্লাড
ব্যাঙ্ক আছে। তার মধ্যে ১১৬২টি সরকারী। বাকীগুলো বেসরকারী। এই বেসরকারী
প্রতিষ্ঠানের অনেকেই রক্ত নিয়ে ব্যবসা করে। সুতরাং আমার রক্ত নিয়ে কেউ ব্যবসা করবে
–এটাও একটা বিরটা সমস্যা মানুষকে বোঝানোর জন্য।
তাই বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের
প্রাকাল্লে সরকারকে অনুরোধ করি--- সরকারকেই সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে। অনেক কিছুর
দায়িত্ব তো সরকার নিচ্ছে তাহলে এটার দায়িত্ব সরকার নেবে না কেন?
প্রশ্নঃ রক্তদানের আগে এবং রক্তদানে পরে কি করা উচিত?
উত্তরঃ রক্তদানের
আগে হালকা খাওয়া উচিত এবং জল পান করা উচিত।
এবং
রক্তদানের পরে কম করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া দরকার। সেদিন ১ লিটার জল
বেশি খাওয়া।
রক্তদানের
পরে সিগারেট , মদ খাওয়া উচিত নয়। অন্ততঃ ১ঘন্টার আগে সাইকেল, মোটর সাইকেল এর মত
একচাকার গাড়ী চালানো উচিত নয়। তার কারণ মেন্টালি। রক্ত দিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয়
না কিন্ত মানসিক কারণে বিশেষ করে যারা প্রথম রক্ত দেয় তাদের ক্ষেত্রে এটা বলা হয়।
প্রশ্নঃ রাজ্যে জনসংখ্যার কত শতাংশ রক্তদান করে? ঘাটতিই বা কত
শতাংশ?
উত্তরঃ বিশ্বস্বাস্থ্য
সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী জনসংখ্যার ১ শতাংশ রক্তের দরকার হয়। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ১২
কোটি জনসংখ্যার ১২ লক্ষ ইউনিট রক্ত দরকার। আমাদের রাজ্যে ১২ কোটি লোকের মধ্যে ৬
লক্ষ লোকও রক্তদান করে না। হাজারে ৫ জন লোকও রক্তদান করলেও সমস্যা মিটে যায়।
কিন্তু সেটাও আমরা করাতে পারি না। সেটা আমাদের ব্যর্থতা। ফলে প্রতিবছরই ঘাটতি রয়ে
যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
মতে, বিশ্বের
মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ রক্ত দান করে থাকেন। আশার কথা, ২০২০
সালের মধ্যে পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে শতভাগ রক্ত সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিতের
সিদ্ধান্ত নিয়েছে হু। এর মধ্যে ১৭৩ টি দেশের মধ্যে সফল হয়েছে ৬২টি দেশ। প্রতিবেশী
দেশ শ্রীলঙ্কাও সফল হয়েছে। তার মানে যারা সফল হয়েছে তারা কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ
করেছে। যা আমরা করিনি। ফলে আমরা সফলতার কাছাকাছি পৌছাতে পারি নি। কেন্দ্রীয় রক্ত
সঞ্চালন পর্ষদ, প্রতিটি রাজ্যে রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ আছে। আছে বহু স্বেচ্ছসেবী
সংগঠন যারা রীতিমত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবীসংগঠনের যৌথ
সহযোগিতায় যদি রাজ্যভিত্তিক, জেলাভিত্তিক যুবসমাজকে রক্তদানের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করা
যায় তাহলে অচিরে লাভ হবে দেশের রাজ্যের।
উত্তরঃ জনসচেতনতার জন্য
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে রক্তবিজ্ঞান, রক্তদান কে ঢোকাতে হবে।
শুধু পাঠ্যক্রমে ঢোকালেই হবে না, তার সাথে বাস্তবে প্রয়োগ করার ব্যাপারে সহায়তা
করতে হবে।
দেখা গেছে যে সব রাজ্যে
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তদান সচেতনতা নিয়ে দারুন কাজ করছে, সে সব রাজ্যগুলো এবিষয়ে
ভাল ফলও করছে। এবিষয়ে দেশে যে ১০টি রাজ্য এগিয়ে আছে তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও বেশ
ভালো জায়গায় আছে।
কিন্তু সপ্তদশ লোকসভাকে
কেন্দ্র করে মার্চ মাস থেকে যে অশান্ত পরিবেশ রাজ্যে গড়ে উঠেছিল তা আজও বর্তমান।
তার ফলে মার খাচ্ছে রক্তদান শিবির। এই মুহূর্তে দলমত নির্বিশেষে রক্তদানে এগিয়ে
আসতে হবে কারণ রক্তগ্রহীতা কিন্তু সব রাজনৈতিক দলেরই সমর্থক হতে পারে। অবিলম্বে
দলমত নির্বিশেষে রক্তদান শিবিরকে গুরুত্বপ্রদান করে পশ্চিমবঙ্গের যে রক্তদাতার
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সেটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক
দলকে।
জাতীয় নীতিতে বলা হয়েছে
যে, কেন্দ্রীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ ও রাজ্য সরকার, রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ—তাদের
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে আর্থিক ও অন্যান্য ভাবে সহায়তা করার কথা। কিন্তু
বাস্তবে সেটা হচ্ছে না ফলে অনেকাংশেই মুখ থুবড়ে পড়ছে এই মহৎ কাজ। মোট কথা
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সঙ্গে সরকারের আরও নীবিড় সম্পর্ক হওয়া প্রয়োজন। সাক্ষাৎকারঃ ওসিউর রহমান,৭৯৮০১৫৫২৭৭
No comments:
Post a Comment