অজানা জ্বর
ডাঃ প্রদীপ কুমার দাস,
সভাপতি, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল
অ্যাসোসিয়েশন, শ্রীরামপুর
দেহের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের (৯৮.৬০) থেকে বেশি হয় তখন আমরা
জ্বর অনুভব করি। ঐ জ্বরের নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। তবে
সেই জ্বর যখন দিনের পর দিন ধরে চলতে থাকে ও তাপমাত্রার পারদ যখন কিছুতেই নেমে
স্বাভাবিক হয় না তখনই সেটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় চিকিৎসকদের কাছে। অনেক সময় তো
বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কোন কারণ খুঁজে
পাওয়া যায় না। তাকে বলা হয় অজানা জ্বর। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে কোনও জ্বরকে অজানা
জ্বর তখনই বলা হবে- যখন দেহের তাপমাত্রা প্রায়শই ১০১০ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যাচ্ছে, থামার কোন
লক্ষণ নেই, এক নাগাড়ে ৩ সপ্তাহ ধরে চলছে, সেইসঙ্গে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও
তার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- তখনই তাকে চিকিৎসকেরা অজানা জ্বর বলে থাকেন।
সম্প্রতি অজানা জ্বরকে কিছুটা নতুন তকমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোন
আক্রান্ত ব্যক্তি যদি পরপর তিনবার হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে ডাক্তার দেখাতে
যান জ্বরের উপশমের জন্যে অথবা হাসপাতালে ৩ দিন ভর্তি থেকে জ্বরের কারণ খোঁজার
চেষ্টা হয়েছে
অথবা বাড়ি থেকে চিকিৎসাকেন্দ্রে অথবা হাসপাতালে পরপর ৭ দিন উপস্থিত থেকেছেন জ্বরের কারণ খোঁজার জন্যে বা নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে তবুও কোন কারণ খুজে পাওয়া যায় নি- এধরণের জ্বরকে চিকিৎসকেরা অজানা জ্বরের তকমা দিয়ে থাকেন।
অথবা বাড়ি থেকে চিকিৎসাকেন্দ্রে অথবা হাসপাতালে পরপর ৭ দিন উপস্থিত থেকেছেন জ্বরের কারণ খোঁজার জন্যে বা নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে তবুও কোন কারণ খুজে পাওয়া যায় নি- এধরণের জ্বরকে চিকিৎসকেরা অজানা জ্বরের তকমা দিয়ে থাকেন।
চিকিৎসকদের মতানুযায়ী এই অজানা জ্বরের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে যেগুলোর কথা ভাবা
হয় সেগুলো হল- কোন সংক্রমণ। যেমন- মূত্রনালীতে সংক্রমণ,
শ্বাসনালীতে সংক্রমণ (বিশেষ করে যক্ষ্মা রোগ), হৃদযন্ত্রের সংক্রমণ, দেহের
অভ্যন্তরে কোথাও লুক্কায়িত জমে থাকা পুঁজ-রক্ত-রস। এছাড়া ভাবা হয় দেহের মধ্যে
কোথাও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। যেমন- লিমফোমা অথবা লিউকেমিয়ার
কথা, দেহের সংযোজন কলার অসুখ- বিশেষ করে এস এল ই, রিউমেটোয়েড আর্থারাইটিস,
টেমপোরাল আর্থারাইটিস ইত্যাদি।
এছাড়া দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেখানে ভেঙ্গে পড়ে বিশেষ করে এইচ আই ভি
সংক্রমণ,ফুসফুস ছাড়া দেহের অন্য কোন স্থানে যক্ষ্মা রোগের আক্রমণ ও কিছু ছত্রাক
জাতীয় সংক্রমণ যেমন হিস্টোপ্লাজমোসিস, ককসিডিওডোমাইকোসিস, সার্কাডোসিস এর কথা
ভাবা হয় অজানা জ্বরের কারণ হিসাবে।
বেশ কিছুদিন আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামে অজানা জ্বরের
আতংক চেপে বসেছিল গ্রামবাসীদের মনে। ব্যাপক অনুসন্ধানের পরে জানা যায় এই জ্বরের
কারণ আফ্রিকান হান্টা ভাইরাস(এস এম জিভি)। এটা প্রথমে সনাক্তকরণ করা হয় গিনিয়া,
পশ্চিম আফ্রিকা থেকে। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে গায়ে দেখা দেয় র্যাশ, প্রচন্ড গা
ব্যথা ও প্রবল জ্বর ও মাথার যন্ত্রণা হয়।
বাড়িতে বেড়াল পুষলে তার গা চেটে দেওয়া বা আঁচড়ে অজানা জ্বরের কারণ হতে পারে
যাকে বলা হয় ‘ক্যাট স্ক্রাচ ডিজিজ’। এছাড়া
বেশ কিছু ভাইরাল সংক্রমণ যেমন এবস্টেম ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস এর সংক্রমণে
অজানা জ্বরের কারণ হতে পারে। দেহের মধ্যে কোন ক্যান্সার বিশেষ করে কোলনে, যকৃতে,
লসিকা গ্রন্থিতে, রক্তের শ্বেতকণিকাতে, প্রস্টেট গ্রন্থিতে, কিডনিতে ক্যান্সার হলে
অজানা জ্বরের সমস্ত লক্ষণ দেখা যায়।
কিছু ওষুধও আবার অজানা জ্বরের কারণ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। এছাড়া
পরজীবী সংক্রমণ যেমন ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, কৃমির জন্যেও অজানা জ্বর দেখা দিতে
পারে।
১৭৭৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা শহরের ডেভিড বাইলন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা
জানিয়েছিলেন এক পত্রের মাধ্যমে। শুধু তিনি নন, কমবেশি সবাই অজানা জ্বর আক্রান্ত
হয়েছিল। জ্বরের সঙ্গে ছিল দুই পায়ে অসহ্য ব্যথা এবং অস্থি-সন্ধিস্থল
ফোলা। নড়াচড়া করার ক্ষমতা ছিল না। দোতলার সিঁড়ি ভাঙাও
দুঃস্বপ্নের ব্যাপার ছিল তাঁর কাছে। তিন সপ্তাহ ধরে তাঁর জ্বর ছিল। আস্তে আস্তে তা
কমে যায়। শহরের সমস্ত লোকেদের ঐ ধরণের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকেরা
ভেবেছিলেন ডেঙ্গু জ্বরের মহামারি হয়েছে। পরে জানা যায় সেটা ডেঙ্গু জ্বর নয়,
চিকেনগুনিয়া জ্বর। এটি একটি ভাইরাস ঘটিত জ্বর। যার নাম চিকেনগুনিয়া ভাইরাস বা চিক ভি। এটি আরবোভাইরাস পরিবারভুক্ত। এশিয়ায় চিকভি এর সন্ধান পাওয়া যায় ব্যাংককে ১৯৬০ সালে। পরবর্তীকালে ভেলোরে, কলকাতায় ও মহারাষ্ট্রে পাওয়া যায় ১৯৬৪ সালে।
চিকেনগুনিয়া জ্বর। এটি একটি ভাইরাস ঘটিত জ্বর। যার নাম চিকেনগুনিয়া ভাইরাস বা চিক ভি। এটি আরবোভাইরাস পরিবারভুক্ত। এশিয়ায় চিকভি এর সন্ধান পাওয়া যায় ব্যাংককে ১৯৬০ সালে। পরবর্তীকালে ভেলোরে, কলকাতায় ও মহারাষ্ট্রে পাওয়া যায় ১৯৬৪ সালে।
ভারতবর্ষে বড় ধরণের মহামারী দেখা যায় ২০০৬ সালে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শুরু করে
১৬ টি রাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১.৩৯ মিলিয়ন লোক সে সময়ে আক্রান্ত হয়।
২০০৬ সালে এই রোগের সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছিল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে,
শ্রীলঙ্কায় ও মালদ্বীপে।
ডেঙ্গু ও চিকেনগুনিয়া দুটি রোগের বাহক এডিস মশা। এডিস ঈজিপ্টি ও এডিস
এ্যালক্যাপ্টাস। রোগের লক্ষণও প্রায় একইরকম। ডেঙ্গিতে প্রবল জ্বর হয়, গা পায়ে,
মাথায়, চোখে, হাঁটুতে ভয়ানক ব্যথা হয় এবং গায়ে লালচে র্যাশ বেরোয়। সেগুলো খুব
চুলকায়। একটা পার্থক্য হল সন্ধিস্থলে ব্যথা চিকেনগুনিয়ায় প্রচন্ড হয়। যার ফলে
প্রথম ৪-৫ দিন রোগী নড়াচড়া করতে পারে না। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সন্ধিস্থলের
ব্যথাটা ক্রনিক বাতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রোগের জটিলতা স্বরূপ
দ্রুত হারে অনুচক্রিকা কমে গিয়ে দেহের
নানা স্থান থেকে রক্তপাত কিংবা প্লাজমা লিকেজ হয়ে গিয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের
জন্যে রোগী মারা যেতে পারে। যার সংখ্যাটা অবশ্য কোন মতেই ২.৫
শতাংশ বেশি নয়। সেক্ষেত্রে চিকেনগুনিয়ার ক্ষেত্রে ও ধরণের জটিলতা দেখা দেয়
না আর মৃত্যুর হার খুবই কম (প্রতি হাজারে ১ জন করে অর্থাৎ ০.০৯ শতাংশ এর মত)। তবে
সন্ধিস্থলের ব্যথা কিংবা কোমরে, হাতে পায়ের ব্যথায় রোগীকে শয্যাশায়ী করে দেয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে একদম পঙ্গুর পর্যায়েও চলে যায়।
চিকুনগুনিয়া রোগীর প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় তানজানিয়ায় ১৯৫২ সালে। ওদের এলাকার
ভাষা অনুযায়ী রোগীর নাম দেওয়া হয় ‘কুনগুণওয়ালা’ যার অর্থ হল ‘বেঁকে নুয়ে যাওয়া’। পরবর্তীকালে এর নাম হয় চিকেনগুনিয়া।
এই ভাইরাস দেহের মধ্যে ঢোকার পরে রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে ১ থেকে ১২
দিনের মধ্যে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩-৭ দিনের মধ্যে। ঐ ভাইরাস সংক্রমণের ফলে চোখ লাল
হয়, চোখ দিয়ে জল ঝরে, চোখ করকর করে ও পিচুটি পড়তে থাকে। এই রোগে সাময়িকভাবে
যকৃতের কার্যকারিতাও কমে যায়, খুব কম সংখ্যক কেসে স্নায়ুরোগ, পক্ষাঘাত ও
নিউরোপ্যাথির মত রোগ হতে দেখা গেছে চিকনগুনিয়া সংক্রমণের পরে। যদিও ডেঙ্গুর মত
মৃত্যুভয় এই রোগে নেই বললেই চলে। রোগটা বাহিত হয় মশা থেকে মানুষ আবার মানুষের থেকে মশার মধ্যে। কোন
কোন ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের থেকে ভূমিষ্ট সন্তানের মধ্যে সংক্রামিত হতে দেখা
গেছে ডেঙ্গুর মত। এর অবাধ গতি সর্বত্রই-
এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের প্রায় সব দেশেই। এখনো পর্যন্ত এ
রোগের কোন টিকা আবিষ্কৃত হয় নি। তাই প্রতিরোধই এ রোগের একমাত্র অস্ত্র।
সর্বোপরি যেটা দরকার রোগ হলে সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, রোগটা
যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেটা লক্ষ্য রাখা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো জোরদার
করা ও সারাবছর ধরে কড়া নজরদারি রাখা দরকার সরকারি, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী
প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত সর্বস্তরে।
অজানা জ্বরের আর একটা কারণ হল ডেঙ্গু জ্বর। এর কারণ হল ডেঙ্গু ভাইরাসের
সংক্রমণ। এডিস মশা দ্বারা এটা বাহিত হয়। সাধারণত মশাগুলো পরিষ্কার জলে জন্মায়।
দিনের বেলায় কামড়ায় মানুষকে বেশি। এই রোগের লক্ষণ হল প্রবল জ্বর, হাতে গায়ে পায়ে
প্রচন্ড ব্যথা। চোখের পিছনের দিকে তীব্র ব্যথা, দু-তিনদিনের মধ্যে গায়ে র্যাশ। কখনও
কখনও বমি বমি ভাব। খেতে অরুচি, মাথা ঘোরা এবং তার সঙ্গে পাতলা পায়খানা। এই সময়
রোগীকে প্রচুর পরিমানে জল খেতে বলা হয় কারণ এসময়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে জল
বেরিয়ে যায় যার জন্যে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে কিংবা অজ্ঞান হয়ে যেতে
পারে। একে বলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এছাড়া এ রোগে অণুচক্রিকা কিংবা প্রেটলেট কমে
গেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্লিডিং হয়- দাঁতের গোড়া ও মুখ দিয়ে, কাশির সঙ্গে,
পায়খানার দ্বার দিয়ে। হাতে পায়ে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ হতে দেখা যায়। এটাকে ‘ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার’ বলে। এ রোগের কোন
সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। রোগের লক্ষণগুলোর উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়।
যেহেতু এই রোগটা মশার দ্বারা ছড়ায়, তাই এ ধরণের মশা যেসব জায়গায় জন্মায় (ফুলদানি,
জলের পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা, জলের খোলা ট্যাঙ্ক, চৌবাচ্ছা, কুয়ো,
ফেলে দেওয়া ভাঁড় বা প্লাস্টিকের কাপ ও নির্মীয়মান বাড়িগুলির জমা রাখা জল) সেগুলো
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।
গত বছর কেরালায় বেশ কয়েকজন মারা যায় অজানা জ্বর নিয়ে। চিকিৎসকদের পরীক্ষা
নিরীক্ষায় ধরা পড়ে ঐ জ্বরের কারণ হল নিপা ভাইরাস সংক্রমণ। এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়
পশুপাখী থেকে। পরে মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমণ ছড়ায়। এই ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে
ম্যালেশিয়া থেকে ১৯৯৮ সালে। পরে সিঙ্গাপুরে ধরা পড়ে ১৯৯৯ সালে। এরপরে বিভিন্ন দেশ
যেমন থাইল্যান্ড, ইন্দোনোশিয়া, ঘানা ও ফিলিপাইন্সে এই ভাইরাসের
সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। বাংলাদেশে ২০০১ সালে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশে যে সমস্ত ফল খাওয়া বাদুড়েরা তালের রস খেতে আসে সেখান থেকে তাদের প্রস্রাব ও লালার রসে মিশে মানুষের দেহেতে চলে আসে কাঁচা তালের রস খাওয়ার ফলে। শুধু তাই নয় কাঁচা যে কোন ফলের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সংক্রামিত করে কাঁচা ফল খেকো বাদুড়েরা। এছাড়া এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্যে দায়ী হল গৃহপালিত জন্তু যেমন শুয়োর, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া, বিড়াল ও কুকুর। ১৯৯৮ সালে ম্যালেশিয়ায় যখন এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম
ধরা পড়ে তখন শুয়োরের মধ্যেই এই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেছিল। সেখান থেকে প্রায় ৩০০ জন ঐ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে মারা গিয়েছিল প্রায় ১০০ জন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে যখন এই ভাইরাসেরর সংক্রমণ ঘটেছিল সে সময়ে দায়ী ছিল ফল খেকো বাদুড়েরা। বাংলাদেশে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সালে বিভিন্ন জায়গায়। এদেশে শিলিগুড়িতে ঐ ভাইরাস সংক্রমণের জন্যে দায়ী ছিল ঐ ফলখেকো বাদুড়েরা।
সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। বাংলাদেশে ২০০১ সালে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশে যে সমস্ত ফল খাওয়া বাদুড়েরা তালের রস খেতে আসে সেখান থেকে তাদের প্রস্রাব ও লালার রসে মিশে মানুষের দেহেতে চলে আসে কাঁচা তালের রস খাওয়ার ফলে। শুধু তাই নয় কাঁচা যে কোন ফলের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সংক্রামিত করে কাঁচা ফল খেকো বাদুড়েরা। এছাড়া এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্যে দায়ী হল গৃহপালিত জন্তু যেমন শুয়োর, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া, বিড়াল ও কুকুর। ১৯৯৮ সালে ম্যালেশিয়ায় যখন এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম
ধরা পড়ে তখন শুয়োরের মধ্যেই এই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেছিল। সেখান থেকে প্রায় ৩০০ জন ঐ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে মারা গিয়েছিল প্রায় ১০০ জন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে যখন এই ভাইরাসেরর সংক্রমণ ঘটেছিল সে সময়ে দায়ী ছিল ফল খেকো বাদুড়েরা। বাংলাদেশে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সালে বিভিন্ন জায়গায়। এদেশে শিলিগুড়িতে ঐ ভাইরাস সংক্রমণের জন্যে দায়ী ছিল ঐ ফলখেকো বাদুড়েরা।
নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে যে সমস্ত লক্ষণগুলি দেখা যায় সেগুলো হল- ধূম জ্বর,
মাথার যন্ত্রণা, আচ্ছন্ন ভাব, ভুল বকা, বমি, হাতে পায়ে ব্যথার সঙ্গে উত্তরোত্তর
জ্বর বাড়তে থাকা ও এনকেফালাইটিসের সব লক্ষণগুলো এসে দেখা দিতে থাকে। কখনো কখনো
নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্টও দেখা দেয় এবং এর পরেই খিঁচুনী সহ কোমায় চলে যায়। তবে যে
সমস্ত রোগীরা এর পরে বেঁচে যায় তাদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্বাভাবিকতা সব ক্ষেত্রেই
ফিরে আসে না। ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্নায়ুঘটিত দুর্বলতা থেকেই যায়। এই রোগে আক্রান্ত
হওয়ার পরে মৃত্যুর হার ৪০-৭৫ শতাংশ, কারণ এ রোগের যথাযথ কোন ওষুধ আজ পর্যন্ত
আবিষ্কৃত হয়নি। সবটাই লক্ষণভিত্তিক ও সাপোর্টিভ চিকিৎসা করা হয়। ঐ রোগের
বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন টিকা বা ভ্যাকসিন বের হয় নি। সতর্কতার সঙ্গে এসব
রোগীদের পরিচর্চা করতে হবে। কাঁচা ফল খাওয়া চলবে না। পাকা ফল ভাল করে ধুয়ে নিয়ে
খেতে হবে। খামারের পশু পাখিদের শুশ্রুষা করার প্রয়োজন হলে হাতে ফুল গ্লাভস ও
অন্যান্য প্রতিরোধক জামা-কাপড় পরে ওদের গায়ে হাত দিতে হবে, ওদেরকে পরিচর্চা করতে
হবে। রোগীদের পরীক্ষা করার পরে সব সময়ই হাত ভাল করে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ভয় পেলে
চলবে না, শুধু দরকার সদা সতর্ক মনোভাব ও কড়া নজরদারি।
গত বছর উত্তরবঙ্গে অজানা জ্বরের থাবা জাঁকিয়ে বসেছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ
ও হাসপাতালে ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অজানা জ্বরের দাপটে থরহরি কম্পমান। পরে
জানা য়ায় ঐ রোগের কারণ হল জাপানীজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণ। এটি
একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। কিউলেক্স মশা এই রোগ ছড়ায়। এই মশককুল ছোট ছোট জলাশয়, ছোট খালবিল ও ধানক্ষেতে জন্মায় ও সেখানে বংশবৃদ্ধি করে। এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এর প্রকোপ বেশি। বর্ষার ঋতুতে বেশি পরিমানে দেখা যায়। এই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেছে গরু, মহিষ, শুয়োর, ঘোড়া, ডাক পাখি, সারস, বক যেগুলো জলাশয়ের ধারে ঘুরে ফিরে বেড়ায়। শুয়োরের মধ্যে এরা দ্রুত গতিতে বংশ বৃদ্ধি করে। ঐ রোগের ভাইরাস, মানুষের দেহে ঢোকার ৫-১৫ দিন পরে রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, অবসাদ, পেটের গন্ডগোল প্রথমে দেখা দেয়। ১-৬ দিন পর থেকে জ্বর বাড়তে থাকে প্রবলভাবে। শুরু হয় তড়কা সেই সঙ্গে স্নায়ুঘটিত পক্ষাঘাত। শেষে
রোগী কোমায় চলে গিয়ে মারা যেতে পারে। প্রতিকার মশককুলকে ধ্বংস করা। বিশেষ করে নোংরা জলাশয়ের জল, ধানখেত এর আশপাশ অঞ্চল কীটনাশক স্প্রে করে মশার বংশকে ধ্বংস করা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, রাতে মশারী ব্যবহার করা, রোগ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আর রোগ যাতে না হয় সেজন্যে টিকা নেওয়া যেতে পারে।
একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। কিউলেক্স মশা এই রোগ ছড়ায়। এই মশককুল ছোট ছোট জলাশয়, ছোট খালবিল ও ধানক্ষেতে জন্মায় ও সেখানে বংশবৃদ্ধি করে। এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এর প্রকোপ বেশি। বর্ষার ঋতুতে বেশি পরিমানে দেখা যায়। এই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেছে গরু, মহিষ, শুয়োর, ঘোড়া, ডাক পাখি, সারস, বক যেগুলো জলাশয়ের ধারে ঘুরে ফিরে বেড়ায়। শুয়োরের মধ্যে এরা দ্রুত গতিতে বংশ বৃদ্ধি করে। ঐ রোগের ভাইরাস, মানুষের দেহে ঢোকার ৫-১৫ দিন পরে রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, অবসাদ, পেটের গন্ডগোল প্রথমে দেখা দেয়। ১-৬ দিন পর থেকে জ্বর বাড়তে থাকে প্রবলভাবে। শুরু হয় তড়কা সেই সঙ্গে স্নায়ুঘটিত পক্ষাঘাত। শেষে
রোগী কোমায় চলে গিয়ে মারা যেতে পারে। প্রতিকার মশককুলকে ধ্বংস করা। বিশেষ করে নোংরা জলাশয়ের জল, ধানখেত এর আশপাশ অঞ্চল কীটনাশক স্প্রে করে মশার বংশকে ধ্বংস করা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, রাতে মশারী ব্যবহার করা, রোগ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আর রোগ যাতে না হয় সেজন্যে টিকা নেওয়া যেতে পারে।
বিগত দিনগুলেতে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো বিশেষ করে সিনিয়া, নাইজেরিয়া,
লিবারিয়া, সিরায়ার বহুলোক মারা গেছে অজানা জ্বরে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী,
অ-চিকিৎসক কর্মীও আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এই অজানা রোগে। ভয়ে অনেকে হাসপাতাল/স্বাস্থ্যকেন্দ্র
থেকে পালিয়েও যায়। পরে জানা যায় এই রোগের কারণ হল ইবোলা ভাইরাস। এই ভাইরাস
প্রথম ধরা পড়ে সুদাম ও কঙ্গোতে ১৯৭৬ সালে। এরপরে সাব-সাহারান আফ্রিকায় দ্রুত
মহামারির সৃষ্টি করে এই রোগ। এই ভাইরাস সংক্রামিত হয় একধরণের বানর কিংবা ফল খাওয়া
বাদুড়ের দিয়ে, শুয়োর থেকেও ছড়াতে পারে। কিংবা মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে
সরাসরি। ওইসব পশুপাখি রক্ত কিংবা দেহরসের সংমিশ্রণ হলে অথবা মানুষ থেকে মানুষে
শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে দ্রুত গতিতে।
ইবোলা ভাইরাস দেহের মধ্যে ঢুকলে এক সপ্তাহ সময়
নেয় রোগের লক্ষণগুলো ফুটে উঠতে। প্রাথমিক লক্ষণ হল- জ্বর, গলায় ব্যথা, উদরাময়, মুখ-নাক-কান দিয়ে রক্তপাত, মুখের টাগরাটা অস্বাভাবিক ভাবে লাল হয়ে যাওয়া, যৌনাঙ্গ ফুলে যাওয়া, সারা গায়ে হামের মত র্যাশ বেরোয়। চামড়ায় হাত দিলেই ব্যথা বোধ হয়। এরপরেই ৪০-৫০ শতাংশ কেসে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকে। বিশেষ করে নাক, মাড়ি,
যৌনপথ ও খাদ্যনালী থেকে। এই রক্তপাতের ঘটনা ইঙ্গিত দেয় রোগের ভয়বহতার সংকেত। এখনো পর্যন্ত এই রোগের সঠিক কোন চিকিৎসা নেই। তাই এই রোগের চিকিৎসা মূলত লক্ষণভিত্তিক, যেহেতু এই রোগের প্রতিষেধক টিকা আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, তাই এ রোগ ঠেকাতে বিশেষ ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে চলার প্রয়োজন আছে।
নেয় রোগের লক্ষণগুলো ফুটে উঠতে। প্রাথমিক লক্ষণ হল- জ্বর, গলায় ব্যথা, উদরাময়, মুখ-নাক-কান দিয়ে রক্তপাত, মুখের টাগরাটা অস্বাভাবিক ভাবে লাল হয়ে যাওয়া, যৌনাঙ্গ ফুলে যাওয়া, সারা গায়ে হামের মত র্যাশ বেরোয়। চামড়ায় হাত দিলেই ব্যথা বোধ হয়। এরপরেই ৪০-৫০ শতাংশ কেসে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকে। বিশেষ করে নাক, মাড়ি,
যৌনপথ ও খাদ্যনালী থেকে। এই রক্তপাতের ঘটনা ইঙ্গিত দেয় রোগের ভয়বহতার সংকেত। এখনো পর্যন্ত এই রোগের সঠিক কোন চিকিৎসা নেই। তাই এই রোগের চিকিৎসা মূলত লক্ষণভিত্তিক, যেহেতু এই রোগের প্রতিষেধক টিকা আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, তাই এ রোগ ঠেকাতে বিশেষ ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে চলার প্রয়োজন আছে।
অজানা জ্বরের আর একটা কারণ হল স্ক্রাব টাইফাস। রিকেটসিয়া সুটসোগোমুসি নামক
এক অতি ক্ষুদ্রাণু জীবানু। এরা বাহিত হয় উকুনের মত অতিক্ষুদ্র এক জীবের মধ্যে।
এছাড়া মেটো ইঁদুর, ও মাদি ইঁদুর এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ নিজেরা ঐ
রোগের ভুক্তভোগী হয় না কিন্তু জীবানুটার বাড় বাড়ন্তে খুবই সাহায্য করে। এই
স্ক্রাব টাইফাস প্রথমে ধরা পড়ে জাপান, চীন, ফিলিপাইন্স ও অষ্ট্রেলিয়ায়। পরের দিকে
ভারত, পাকিস্তান, তীব্বত, আফগানিস্তান, এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে। ১৯৪৫ সালে আসাম ও
পশ্চিমবঙ্গে স্ত্রাব
টাইফাস ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছিল। রিকেটসিয়া সুটসোগোমসি দেহেতে বিশেষ করে চামড়ায় সংক্রমণের পরে রোগ হতে সময় লাগে ১০-১২ দিন, কখনো ৬-২১ দিন। দেখা দেয় প্রবল জ্বর তার সঙ্গে কাঁপুনি, অসহ্য মাথার যন্ত্রণা, অবসাদ, কিছু ভাল না লাগা, অসহায়বোধ, মানসিক দৈহিক চঞ্চলতা ও ছটফটানি। জ্বরের পাঁচদিনের মাথায় গুড়ি গুড়ি র্যাশ বের হয় গায়ে হাতে মুখে, দেহের সর্বত্র লসিকাগ্রন্থিগুলোর স্ফীতি হয়। এই রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল, দেহের কোন না কোন জায়গায়
বিশেষ করে হাতে বা পায়ে দাঁত বের করানো ঘা তৎসহ কালো রঙের খোসা যেটা ইঙ্গিত দেয় এস্থানে ছোট্ট পোকা কামডের উপস্থিতি। এই রোগের কারণে মৃত্যু হয় না বললেই চলে। তবে কখনো কখনো এই রোগের থেকে এনকোফালাইটিস দেখা দিতে পারে। তার জন্যে মৃত্যু হতে পারে। এই রোগ উপশমের জন্যে ভাল ওষুধ আছে।
টাইফাস ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছিল। রিকেটসিয়া সুটসোগোমসি দেহেতে বিশেষ করে চামড়ায় সংক্রমণের পরে রোগ হতে সময় লাগে ১০-১২ দিন, কখনো ৬-২১ দিন। দেখা দেয় প্রবল জ্বর তার সঙ্গে কাঁপুনি, অসহ্য মাথার যন্ত্রণা, অবসাদ, কিছু ভাল না লাগা, অসহায়বোধ, মানসিক দৈহিক চঞ্চলতা ও ছটফটানি। জ্বরের পাঁচদিনের মাথায় গুড়ি গুড়ি র্যাশ বের হয় গায়ে হাতে মুখে, দেহের সর্বত্র লসিকাগ্রন্থিগুলোর স্ফীতি হয়। এই রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল, দেহের কোন না কোন জায়গায়
বিশেষ করে হাতে বা পায়ে দাঁত বের করানো ঘা তৎসহ কালো রঙের খোসা যেটা ইঙ্গিত দেয় এস্থানে ছোট্ট পোকা কামডের উপস্থিতি। এই রোগের কারণে মৃত্যু হয় না বললেই চলে। তবে কখনো কখনো এই রোগের থেকে এনকোফালাইটিস দেখা দিতে পারে। তার জন্যে মৃত্যু হতে পারে। এই রোগ উপশমের জন্যে ভাল ওষুধ আছে।
তাই যে কোন জ্বর বেশিদিন ধরে চলতে থাকলে যাকে আমরা
অজানা জ্বর বলে থাকি সেটা আমাদের কাছে অযথা ভয়ের ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে। চিকিৎসকদের
মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের কাছ ব্যয়সাধ্য সমস্যা হয়ে পড়ে। তবুও এই
সমস্যার জন্য আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। বর্তমানে চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রভূত
উন্নতি ও অত্যানুধিক প্রযুক্তির দৌলতে অনেক অজানাই জানার খবর এসে পৌছোছে। তাই
আমাদের দরকার সহিষ্ণুতা, ধৈর্ষ্য ও চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্য
মনোভাব পোষণ।
No comments:
Post a Comment