আতঙ্কিত
না হয়ে, সচেতন হোন
ডাঃ প্রদীপ কুমার দাস,
বিশিষ্ট চিকিৎসক,
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল
অ্যাসোসিয়েশন, শ্রীরামপুর শাখার সভাপতি
বর্ষার জমা জল মশার আঁতুড় ঘর। তাই মশার উৎস বিনাশ
করার একমাত্র উপায় হল জল জমতে না দেওয়া। আর কোথাও জল জমলে তা নিয়মিত পরিষ্কার করা
এবং সঙ্গে সঙ্গে নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার করা। এটাই হল পতঙ্গবাহিত রোগ থেকে
মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়।
গতবছরে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয় এই ডেঙ্গুতে। তাই
এবার সতর্ক প্রশাসন। ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কলকাতা পুরসভা, বিভিন্ন
গ্রাম পঞ্চায়েত নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে, স্কুল
কলেজ,স্বেচ্ছাসেবী সংঘটন, ক্লাব দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে -তাদের মূল উদ্দেশ্য
পতঙ্গবাহিত রোগ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি। প্রশাসন, পৌরসভা,
গ্রামপঞ্চায়েত, বিভিন্ন সংঘটন তারা তাদের কাজ করে চলেছে। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক
হিসাবে আমার/ আপনার কি কোন দায়িত্ব নেই! আমরা যেখানে সেখানে নোংরা
আবর্জনা ফেলছি, যততত্র প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলে নর্দমা বন্ধ করছি,
জল জমিয়ে রেখে মশার আঁতুড় ঘর তৈরি করতে সাহায্য করছি। এটা
কি একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য! সব কিছু পৌরসভা
করবে, প্রশাসন করবে কেন! আমার আপনার ঘরে জলে জমে আছে, তাতে
লার্ভা জন্মেছে কিনা তার নজরদারি কেন পৌরসভা বা প্রশাসনকে করতে হবে! কথায় বলে
নিজের ভালো পাগলেও বুঝে। তাহলে আমরা আমাদের ভালটা কেন বুঝবো না! আমাদের অসচেতনা,
নির্বুদ্ধিতায় পতঙ্গবাহিত রোগে প্রতি কেড়ে নিচ্ছে বহু মানুষের জীবন। আসুন প্রশাসন,পৌরসভার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে রাজ্যকে পতঙ্গবাহিত রোগ থেকে মুক্ত করাই
হোক আমাদের সকলের অঙ্গীকার।
ডেঙ্গু হল মশা বাহিত রোগ। এটা এডিস মশা দ্বারা বাহিত হয়। ডেঙ্গুর কারণ হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস। অন্যান্য মশার মত এরা নোংরা জলে বংশবিস্তার করতে পারে না। সাধারণত
এরা পরিষ্কার জলে জন্মায়। সাধারণত এরা দিনের বেলায় অর্থাৎ সকাল
থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কামড়ায়।
প্রবল জ্বর।
·হাতে পায়ে গায়ে প্রচন্ড ব্যথা।
·গাটে গাটে ব্যথা।
·চোখের পিছনের দিকে তীব্র ব্যথা
· দু তিনদিনের মধ্যে গায়ে র্যাশ। কখনও কখনও বমি বমি ভাব। খেতে অরুচি।
· মাথা ঘোরা এবং তার সঙ্গে সঙ্গে
পাতলা পায়খানা ।
জ্বর হলে প্রথমে কি করা উচিত
জ্বর কমানোর জন্য
প্রাথমিক ভাবে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেটাই নিতে
হবে। অর্থাৎ মাথা ধুয়ে দেওয়া, গা
মুছে দেওয়া এবং প্যারাসিটামল খাওয়ানো। সেই সঙ্গে রুগীকে
প্রচুর পরিমানে জল খাওয়াতে হবে
কারণ এইসময় শরীর থেকে
প্রচুর পরিমানে জল বেরিয়ে যায়।
এমনি যদি বমি, পায়খানা করে তাহলে বোঝা যায় জল বের হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এক্ষেত্রে রক্তের মধ্যে রক্তরসটা টিসু স্পেশ এ চলে আসে যার ফলে
দেখে বোঝা যায় না কিন্তু ভিতরে ভিতরে জলের পরিমানটা কমে যায়। ফলে হঠাৎ করে মাথা
ঘুরে পড়ে যেতে পারে, অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। একে বলে
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। অর্থাৎ প্রচুর পরিমানে জল এবং লবণের ঘাটতি হওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসারটা ফল করে।
রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেম
প্লেট কমে গেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে
ব্লিডিং হয়। দাঁতের গোড়া, মুখ দিয়ে, কাশির সঙ্গে, পায়খানার দ্বার দিয়ে। এবং হাতে
পায়ের রক্তের ছোপ ছোপ হতে দেখা যায়। এইরকম হলে তাকে ডেঙ্গু হেমারাজিক ফিবার বলে।
চিকিৎসাঃ
যেহেতু এটা ভাইরাল ডিজিজ তাই
ভাইরাসের বিরুদ্ধে এ কোন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ
করা উচিত নয়। এই রোগের
সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তাই রোগ লক্ষণগুলোর উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়।
প্রথমতঃ রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা দরকার।
প্রচুর পরিমানে জলীয় জিনিস খাওয়া (জল, নুন জল)।
সেই সঙ্গে প্যারাসিটামল খেলে ব্যথা কমে। আর দুর্বলতার জন্য ভিটামিন
বি কম্পলেক্স খেতে বলা হয়। তবে পর্যায়ক্রমে
অনুচক্রিকা টা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দেবার কোন
প্রয়োজন নেই। অ্যান্টিবায়োটিক দিলে
আরও বেশি দুর্বল হবে এবং সেক্ষেত্রে ভালোর থেকে খারাপই হবে।
প্রতিকারের উপায়ঃ
যেহেতু এটা মশার দ্বারা ছড়ায়। সুতরাং এই ধরণের মশা যেসব জায়গায় জন্মায় (ফুলদানি, জলের পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা, জলের খোলা ট্যাঙ্ক, চৌবাচ্চা, কুয়ো, ফেলে দেওয়া ভাড় বা প্লাস্টিকের কাপ এবং নির্মীয়মান বাড়িগুলির জমা থাকা জল ইত্যাদি) সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাড়ীর আশপাশ পরিষ্কার রাখা। একজন নাগরিক হিসাবে এগুলো নিজের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। পৌরসভার দায়িত্ব জঞ্জাল পরিষ্কার রাখা, মশা নিরোধক ছড়ানো। এতে মশার লার্ভাগুলো নষ্ট হয়।
যেহেতু এটা মশার দ্বারা ছড়ায়। সুতরাং এই ধরণের মশা যেসব জায়গায় জন্মায় (ফুলদানি, জলের পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা, জলের খোলা ট্যাঙ্ক, চৌবাচ্চা, কুয়ো, ফেলে দেওয়া ভাড় বা প্লাস্টিকের কাপ এবং নির্মীয়মান বাড়িগুলির জমা থাকা জল ইত্যাদি) সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাড়ীর আশপাশ পরিষ্কার রাখা। একজন নাগরিক হিসাবে এগুলো নিজের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। পৌরসভার দায়িত্ব জঞ্জাল পরিষ্কার রাখা, মশা নিরোধক ছড়ানো। এতে মশার লার্ভাগুলো নষ্ট হয়।
যেহেতু এই মশা দিনের বেলা কামড়ায় তাই কি ব্যবস্থা নেওয়া উচিতঃ-
এগুলো সাধারণত পরিষ্কার জলে
জন্মায়। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনমতেই এদের বংশবৃদ্ধি না হয়। এছাড়া
মশার কামড় থেকে বাঁচতে ফুল হাতা জামা,প্যান্ট পরতে হবে,ব্যবহার করতে হবে মশা
নিরোধক তেল বা ধূপ।
এখন তো অনেক ধরনের জ্বর হচ্ছে । তো আমি কি করে বুঝবো যে এটা ডেঙ্গু জ্বর?
অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের সাথে এই
জ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ে পার্থক্য করা খুবই মুশকিল। তবে যদি দেখা যায় মাথায় অসহ্য
যন্ত্রণা, তার সঙ্গে গাটে গাটে ব্যথা, জ্বরের দু-তিন দিনের মধ্যে গায়ে রাশ বার
হওয়া, পেশেন্ট এত দূর্বল হয় যে
নড়াচড়া করতে পারছে না ---সেক্ষেত্র ডেঙ্গুর
কথা ভাবা হয় এবং সেইমত রক্ত পরীক্ষা করতে বলা
হয়। এই লক্ষণ না থাকলে অন্য ভাইরাল ফিবার বলে ধরা হয় যা দু-তিন দিনের মধ্যে সেরেও
যায়।
পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া ডেঙ্গু নির্ধারণ করা কি সম্ভবঃ
পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া ডেঙ্গু
নির্ধারণ করা খুবই মুশকিল। কারণ একই রকম লক্ষণ অন্যান্য ভাইরাল ফিবারেও আসতে পারে।
সুতরাং দু-তিন দিন হয়ে যাবার পরও যদি জ্বর না কমে, মাথার যন্ত্রণা, গা হাতে পায়ের
ব্যথা যদি না কমে তাহলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
রোগ ঠিকমত ধরা পড়ার কতদিনের
মধ্যে সেরে উঠবেঃ
সাধারণত এই ভাইরাসগুলি অত্যন্ত
শক্তিশালী এবং রোগীকে ভীষনভাবে দুর্বল করে তোলে। সেইজন্য অন্ততঃ ৭ থেক ১০ দিন এই
জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগে। সেই সময় তাকে সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্রাম নিতে হবে।
যদি দ্বিতীয় বার আবার ডেঙ্গু অ্যাটাক হয় তখন কিন্তু অ্যাটাকটা ভয়াবহ হয়ে দাড়ায়।
আতঙ্কিত হবার কারণ কি আছেঃ-
আতঙ্কিত হবার মত কিছু নেই।
এক্ষেত্রে যদি আমরা একটু সতর্ক থাকি সেক্ষেত্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে
না। যেগুলো দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলো মানুষের অজ্ঞতার কারণেই ঘটে।
তাই বলি ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সচেতন হোন।
সাক্ষাৎকারঃ ওসিউর রহমান, ৭৯৮০১৫৫২৭৭
No comments:
Post a Comment