গ্রীষ্মকালে শিশুদের সমস্যা ও প্রতিকার
ডাঃ কুন্তল বিশ্বাস,
শিশু বিশেষজ্ঞ,
শিশু বিশেষজ্ঞ,
কোলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
প্রশ্ন- গ্রীষ্মকালে শিশুদের সাধারণত কী কী সমস্যা হয়ে
থাকে?
উত্তরঃ গ্রীষ্মকালে শিশুদের ঘামাচি,
ফোঁড়া, জ্বর সর্দিকাশি, বেশী গরমে ডিহাইড্রেশন, রৌদ্দুরে বেশীক্ষণ থাকলে সান
স্ট্রোক বা হিটস্ট্রোক হতে পারে। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন জল ও খাবার থেকে পেটের অসুখ,
ফুড পয়জনিং হতে পারে।
প্রশ্ন-এইসব হলে করণীয় কি
প্রশ্ন-এইসব হলে করণীয় কি
উত্তরঃ রৌদ্দুরে বার হবার আগে সানস্ক্রিন
লোশন (স্বাস্থ্য সম্মত) লাগাতে হয় ও বেশী করে তরল পদার্থ খেতে হয়। রৌদ্দুর থেকে
বাঁচবার জন্য শরীর ঢাকা পোষাক ও ছাতা বা টুপির ব্যবহার বা মাথা ঢাকার ব্যবস্থা
করা বিধেয়।
ঘাম
হলে
ঘাম
হলেই বারে বারে কাপড় দিয়ে মুছে শুকনো করে নেওয়া প্রয়োজন। ঘামাচি হলে সেখানে খাবার
সোডা জলে মিশয়ে পেস্টের মত করে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
ফোঁড়া
হলে
গরম নুন জলে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মিশিয়ে তাই
দিয়ে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়। ফোঁড়াটাকে টেপাটেপি করতে নেই।
পেট
খারাপ হলে
শরীর থকে জল ও লবণ বেরিয়ে যায়। তাই প্রতিবার
পায়খানার পর ও আর এস খাওয়ান দরকার। এর সঙ্গে দরকার জিঙ্ক (১ বছর বয়সের নীচে দৈনিক
১০ মিলিগ্রাম ও ১ বছর বয়সের ওপর দৈনিক ২০ মিলিগ্রাম) মাত্রায় পায়খানা ঠিক হওয়ার
পরেও ১৫ দিতে হয়। এই সময়ে খিদে কমে যায়। তাই চিকিৎসা হিসবেই সহজপাচ্য স্বাস্থকর
খাবার বারে বারে শিশুর চাহিদা অনুযায়ী দিতে হয়।
ফুড
পয়জনিং হলে
চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জ্বর
হলে
ঘরের
তাপমাত্রার জলে ভেজানো কাপড় দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত মোছাতে বা জ্বর বেশী হলে
চান করাতে হবে। জ্বর ওঠার সময়ে তড়কা হবার বিপদ
আছে, হলে দ্রুত তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা প্রয়োজন। এরপর তরল পদার্থ ও খাবার খাইয়ে প্যারাসিটামল ওষুধ ( প্রতি কেজি দেহের ওজনে ১০ মিলিগ্রাম মাত্রায়) খাওয়া তে হবে। সারাদিনে যতবার দরকার ততবারই দেওয়া যায় (সর্ব্বোচ্চ প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্য ২৫০ মিলিগ্রাম)।
আছে, হলে দ্রুত তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা প্রয়োজন। এরপর তরল পদার্থ ও খাবার খাইয়ে প্যারাসিটামল ওষুধ ( প্রতি কেজি দেহের ওজনে ১০ মিলিগ্রাম মাত্রায়) খাওয়া তে হবে। সারাদিনে যতবার দরকার ততবারই দেওয়া যায় (সর্ব্বোচ্চ প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্য ২৫০ মিলিগ্রাম)।
সর্দিকাশি
হলে
জল
ও তরল বেশী করে খাওয়ানো দরকার। সব চাইতে ভাল ফুটন্ত জলের ভাপ তিন ফুট দূরত্ব থেকে
দেওয়ালে- সর্দি তরল হয় ও কাশি কমে। খাবার পরে ঈষ্ণ উষ্ণ জল দিয়ে গার্গিল করা
প্রয়োজন।
নিউমোনিয়া
হলে
চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা দরকার।
প্রশ্ন- ঠিক গ্রীষ্মকালেই কেন
এসব সমস্যা হয়ে থাকে?
উত্তরঃ এই সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে পরিবেশে কিছু অণুজীব সক্রিয়
হয়ে ওঠে। গরমে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায় বলেও সমস্যা হতে পারে। তাই বেশী করে ও আর
এস ও তরল খাওয়ানো দরকার।
প্রশ্ন- ডায়াপার র্যাশ
প্রতিরোধে করণীয় কি —
উত্তরঃ ডায়াপার মূত্র বা পায়খানায় ভিজে থাকলে ডায়াপারে অণুজীব এর
সংক্রমণ ও দীর্ঘ সময় ধরে হাওয়া না পাওয়ার কারণে এটা হতে পারে।
এর প্রতিরোধ-
*ভালো এবং
আরামদায়ক ডায়াপার ব্যবহার করুন।
*দীর্ঘ সময়
ধরে ডায়াপার ব্যবহার করতে নেই।
*ডায়পার
পরিবর্তন করে নতুন ডায়াপার পরানোর আগে জায়গাটা ঠিকঠাক পরিষ্কার রাখুন।
প্রশ্ন- শিশুর শরীর ঠিক রাখতে
কি ধরণের খাওয়া দাওয়া করা উচিত
উত্তরঃ শিশুর অন্ততঃ ২ বছর বয়স অবধি ও তারপরও শিশু যতদিন চাইবে
তাকে স্তন্যপান করালে শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
শিশুর ২
বছর বয়স অবধি খাবারে ছানা ও বাদাম থাকলে তার থেকে অ্যালার্জী হয়। তাই ৬ মাসের পর
থেকে শিশুকে দুধের ঘোলের প্রোটিন ও দই দেওয়া যায়। শিশুর খাওয়ার আগ্রহ ঠিক রাখতে তার
খাবার গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদ আর্কষণীয় করতে হবে। শিশু বড় কারুর খাওয়া দেখে নিজের
পছন্দমত পরিমানই খাবে। শিশুর পাকস্থলীর মাপ ছোট হওয়ার কারণে শিশু একবারে বেশী
খেতে পারে না। তাই তাকে দিনে অল্প করে বারে বারে খাওয়াতে হয়। বড় খাবার ৩-৪ বার ও
জল খাবার ৩-৪ বার। শিশুর খাবারে হালকা গরম তেল (প্রতি কেজি দেহের ওজনে ১ গ্রাম)
ব্যবহার করলে তার মস্তিষ্ক কোষের আবরণ ঠিক মত তৈরী হয়।
প্রশ্ন- মা-বাবা রা গরমে শিশুর
যত্ন কীভাবে নেবেন- বিশেষজ্ঞ হিসাবে আপনার পরামর্শ
উত্তরঃ শিশুর দেহের মধ্যে মাথার অংশের বিস্তার তুলনামূলক বেশী।
তাই এই অংশে তাপ অনভূতি ও তাপ ক্ষরণ বেশী হয়। তাই গরমের সময়ে- বারে বারে এই অংশ
ঘরের তাপমাত্রার জলের ভিজে কাপড়ে মুছিয়ে শুকনো করা দরকার।
শিশুর জন্য
গায়ে পাউডারে ট্যালকম বা প্যারাবেন থাকলে শিশুর শরীরে নানা সমস্যা হয়- তাই এগুলো
ব্যবহার ঠিক নয়।
শিশুকে তেল
মাখলে, তাতে চামড়ার স্বেদ গ্রন্থি বন্ধ হয়ে নানা ধরণের সংক্রমণ হতে পারে। তাই
শিশুকে তেল মাখানো উচিত নয়।
শিশুর
চাহিদা বুঝে- তার সঙ্গে সেই অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়-তাতে শিশুর মানসিক ও শারীরিক
বৃদ্ধ সঠিক হয়।
সাক্ষাৎকারঃ ওসিউর রহমান,৭৯৮০১৫৫২৭৭
সাক্ষাৎকারঃ ওসিউর রহমান,৭৯৮০১৫৫২৭৭
No comments:
Post a Comment