নজর রাখুন

ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন -রোজা রাখার উপায় ডাঃ সেখ হাম্মাদুর রহমান_কনসালট্যান্ট, এন্ডোক্রিনলজি এবং ডায়াবেটিস বিভাগ, মেডিকা হাসপাতাল, মুকুন্দপুর, কলকাতা***নিউরো-রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি-রোজা রাখার নিয়ম ও সতর্কতা-নিউরো বিশেষজ্ঞ, ডা: এম এম সামিম# # #রমজান মাসে সুস্থ থেকে রোজা পালনে কিছু নিয়মাবলী অনুসরণ করুন যা স্বাস্থ্য উন্নত করবে-জানালেন মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ কলিমুজ্জামান মোল্লা।# # #ভারতে আকুপাংচার চিকিৎসার পথিকৃত, ডা: বিজয় কুমার বসুর ১১৩ তম জন্মদিন জাতীয় আকুপাংচার দিবস হিসাবে উৎযাপন# # # মস্তিষ্কের টিউমার, ডাঃ কৌশিক শীল # # #২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হৃদয় দিবস-ডাঃ সৌম্য পাত্র এর স্বাস্থ্যকর অভ্যাসেই রেহাই মিলবে হৃদরোগ থেকে !.##মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ডাঃ অনির্বান রায় এর খুশি মনে সুস্থ থাকুন ! # # #২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হৃদয় দিবস-ডাঃ সৌম্য পাত্র এর স্বাস্থ্যকর !.##মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ডাঃ অনির্বান রায় এর খুশি মনে সুস্থ থাকুন !>Latest news !.

শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫

ডায়াবেটিস,হাইপারটেনশন রোজা রাখার উপায়

        ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন 
    রোজা রাখার উপায়

ডাঃ সেখ হাম্মাদুর রহমান

কনসালট্যান্ট, এন্ডোক্রিনলজি এবং ডায়াবেটিস বিভাগ, মেডিকা হাসপাতাল, মুকুন্দপুর, কলকাতা

ডায়াবেটিস থাকলে কি রোজা রাখা যেতে পারে?
যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে তাহলে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখা যেতে পারে 
১. ডায়াবেটিস রোগী যদি রোজা রাখতে চায়, তবে কমপক্ষে তিন মাস থেকে তার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবেরক্তশর্করা কিভাবে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে নিজে পরীক্ষা করতে হয়, তার প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার। এই ব্যাপারে একটা কথা মনে রাখা উচিত যে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্ত পরীক্ষা করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। রোজার আগে কিডনি, লিভার, কোলেষ্টেরলের পরীক্ষা করা উচিত।
২. পর্যাপ্ত পরিমান জল খাওয়া উচিত।
৩. রোজাদার যদি কখনও শারীরিক অসুস্থতা বোধ করেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব হলে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তশর্করা পরীক্ষা করতে হবে এবং দরকারে রোজা ভাঙ্গতে হবে।
হাইপারটেনশন রোগীরা রোজা রাখতে চাইলে কি কি নিয়ম মানা উচিত-
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রোগীরা রোজা রাখতে পারেন যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। রক্তচাপের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণের মাত্রা হলঃ-
সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার (SBP) - ১০০-১৪০ (মি.মি মার্কারি)
ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার (DBP)- ৬০-৯০ (মি.মি মার্কারি)
এক্ষেত্রে একটা বিষয়ে বিশেষ ধ্যান দেওয়া উচিত। কোন কোন রোগীর উচ্চরক্তচাপের জন্য ডায়ইউরেটিক গ্রুপের ওষুধ চল যা শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রোজাদার ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি এরকম ওষুধ চলে তাহলে শরীরে জলে মাত্রা কম হতে পারে যাকে ডিহাইড্রেশন বলে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এজাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখতে চাইলে কি কি নিয়ম মানা উচিত?
ক. রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে (কমপক্ষে তিনমাস আগে থেকে )
খ. রক্তশর্করা খুব কম (হাইপোগ্লাইসেমিয়া- <৭০ মি.গ্রা/ডে.লি) বা খুব বেশি (হাইপারগ্লাইসেমিয়া-- >৩০০ মি.গ্রা/ ডে.লি) যেন না হয়।
গ.নিয়মিত আহার, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
খাওয়া দাওয়া কেমন হওয়া উচিত?
ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এক সঙ্গে খুব বেশি খাবার খাওয়া,  আবার অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা কোনটাই উচিত নয়। কিন্তু রমজান মাসে যেহেতু ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছু খাওয়া নিষেধ তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে একটু অসুবিধাজনক। তবে ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত যদি তিন থেকে চারবার খাবার খায় তাহলে বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলি হলঃ
ক. পানির পরিমান বেশি খেতে হবে ২-৩ লিটার। চিনির সরবৎ বাদ
খ. তেলেভাজা (আলুর চপ, পেঁয়াজী, বেগুনী, ছোলাভোনা) বাদ দিতে হবে।
গ. ফলের মধ্যে খেজুর, কলা, আঙুর, আম, কাঁঠাল, লিচু বাদ দিতে হবে। তবে আপেল, পেয়ারা, ন্যাসপতি, কমলালেবু, মোসাম্বি লেবু খেতে পারবেন।
ঘ. একসঙ্গে খুব বেশি পরিমান খাবার যেন না খাওয়া হয়!
ওষুধ ঠিকমতো সময় না খাওয়ার ফলে কি অসুবিধা হতে পারে? কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়?
ওষুধ ঠিকমতো সময়ে না খাওয়ার জন্য রক্তশর্করা বাড়তে পারে আবার একসঙ্গে বা অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো ওষুধ খাওয়ার ফলে রক্তশর্করা কম হয়ে যেতে পারে। এই জন্য রোজার আগে একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে কোন ওষুধ কোন সময়ে খেতে হবে সে ব্যাপারে।
কোন কোন ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখবেন না?
ক. অনিয়ন্ত্রিত রক্তশর্করা (>৩০০ মিগ্রা/ডেলি)
খ. যাঁদের রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য দিনে চার বা তার বেশিবার ইনসুলিন নিতে হয়।
গ. আগের তিন মাসের মধ্যে রক্তশর্করা খুব কম হয়ে গেছে ( বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে) বা তিনমাসের মধ্যে রক্তশর্করা বেড়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল।
ঘ. গর্ভবতী মহিলা যদি তাঁর ডায়াবেটিস হয়।
ঙ.যাদের কিডনির সমস্যা আছে বিশেষ করে স্টেজ ৪ বা ৫ বা যাদের নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হয়।
ডায়াবেটিস রোগী যদি রোজা রাখতে চায়, তবে কমপক্ষে তিন মাস থেকে তার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে
রক্তশর্করা কিভাবে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে নিজে পরীক্ষা করতে হয়, তার প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার। এই ব্যাপারে একটা কথা মনে রাখা উচিত যে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্ত পরীক্ষা করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। রোজার আগে কিডনি, লিভার, কোলেষ্টেরলের পরীক্ষা করা উচিত। 
চ. যাদের হার্টের বা মস্তিষ্কের বড় রোগ আছে যেমন- হার্ট অ্যাটাক বা প্যারালাইসিস রোগী।
ডায়াবেটিস রোগী কখন রোজা ভাঙ্গবেন?              
ক.যদি রক্তশর্করা খুব কম হয়ে যায় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) <৭০ মি.গ্রা/ ডে.লি।
খ.যদি রক্তশর্করা খুব বেড়ে যায় (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) >৩০০ মি.গ্রা/ ডে. লি।
গ.যদি হঠাৎ করে কোন শারীরিক অসুবিধা হয়।

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

নিউরো-রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি

নিউরো-রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি
রোজা রাখার নিয়ম ও সতর্কতা

রমজান মাসে রোজা রাখা ইবাদতের অন্যতম অংশ, তবে নিউরোলজিক্যাল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। বিশেষত স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, পারকিনসন ডিজিজ, মাইগ্রেন, স্পন্ডিলাইটিস বা মৃগী রোগ থাকলে রোজার সময় কিছু বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করা উচিত কলমে-নিউরো বিশেষজ্ঞ, ডা: এম এম সামিম, ডি.এম. নিউরোলজি (গোল্ড মেডেলিস্ট), নিমহ্যানস, বেঙ্গালুরু,এম আর সিপিএসসিই নিউরোলজি, লন্ডন

গুরুতর নিউরোলজিক্যাল সমস্যায় রোজা কি নিরাপদ?
যদি কোনো নিউরোলজিক্যাল সমস্যার উন্নতি না হয় বা অবনতি ঘটে (যেমন—শরীরের দুর্বলতা বাড়তে থাকে), তাহলে রোজা না রাখাই উত্তম
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি
নিউরোলজিক্যাল ভাবে সচেতন থেকে রোজা রাখা
যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল, তাঁরা কিছু সতর্কতা মেনে রোজা রাখতে পারেন
মৃগী বা এপিলেপসি:
শেষ ২ মাসে কোনো খিঁচুনি না হলে এবং ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করলে রোজা রাখা যেতে পারে
প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা গভীর ও পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য, কারণ ঘুম কম হলে খিঁচুনি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে
ওষুধের সময় মেনে চলতে হবে:
দিনে ২ বার ওষুধ নিলে
সেহরির সময় (ভোর)
ইফতারের ২ ঘণ্টা পর (রাত, ১০-১২ ঘণ্টার ব্যবধানে)
দিনে ৩ বার ওষুধ নিলে
সেহরির সময়
ইফতারের সময়
ঘুমানোর আগে
দিনে ৪ বার বা তার বেশি ওষুধ লাগলে
রোজা এড়িয়ে চলাই উত্তম
স্ট্রোক ও রোজা এবিষয়ে আপনার পরামর্শ-
স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের জন্য রোজা রাখা সম্পূর্ণ ব্যক্তি ভেদে নির্ভরশীল। কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি
যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল, বিশেষ করে রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা (ব্লাড সুগার) গত কয়েক মাস ধরে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে পারেন
কিন্তু গত ৩ মাসের মধ্যে স্ট্রোক হয়ে থাকলে রোজা না রাখাই উত্তম, কারণ এই সময়টি রোগীর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
ওষুধ গ্রহণের সময়সূচি:
রক্তচাপ ও সুগারের ওষুধ:
সেহরির পর
ইফতারের পর
রক্ত পাতলা করার ওষুধ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ:
সাধারণতরাতে খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, সেটাই অনুসরণ করুন
স্ট্রোকের পর দেওয়া কিছু ভিটামিন:
📌যেকোনো সময় নেওয়া যেতে পারে
 পার্কিনসন রোগী ও রোজা এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনার পরামর্শ-
পার্কিনসন রোগ বা পার্কিনসোনিজম আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখতে পারেন, এবং কিছু ক্ষেত্রে উপবাস উপকারীও হতে পারে তবে ওষুধ গ্রহণের সময়সূচিও রোগের অবস্থা অনুযায়ী কিছু সতর্কতা নেওয়া জরুরি
 যাঁরা রোজা রাখতে পারেন:
যাঁদের হাত-পা কাঁপে, হাঁটা ধীরগতি হয়ে গেছে, কিন্তু অবস্থা স্থিতিশীল এবং Levodopa জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাঁদের রোজা রাখার কারণে গুরুতর কোনো সমস্যা হয় না
যাঁরা দিনে তিনবার Levodopa নেন, তাঁরা—
📌 সেহরির সময়
📌 ইফতারের সময়
📌 ঘুমানোর আগে ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন
 যাঁরা সতর্ক থাকবেন বা রোজা না রাখাই ভালো:
যাঁদের দিনে তিনবারের বেশি Levodopa বা অন্যান্য পার্কিনসন ওষুধ প্রয়োজন, তাঁদের রোজা না রাখাই উত্তম
যদি রোজা রাখতে চান, তাহলে নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত Controlled Release (CR) ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় কার্যকারিতা বজায় রাখা সম্ভব হতে পারে
যাঁরা শয্যাশায়ী বা স্মৃতিভ্রংশে (ডিমেনশিয়া) আক্রান্ত, তাঁদের রোজা না রাখাই ভালো
 মাইগ্রেন ও রোজা  এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসাবে আপনার পরামর্শ-
মাইগ্রেন আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রোজা রাখা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। অনেকের ক্ষেত্রে উপোস থাকলে মাইগ্রেনের তীব্রতা বেড়ে যায়, আবার অনেকের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলে না
 যাঁরা রোজা রাখতে পারেন:
যাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে যে উপোস থাকলেও মাথা ব্যথা বাড়ে না, তাঁরা রোজা রাখতে পারেন
মাইগ্রেন প্রতিরোধী ওষুধ (Preventive Therapy) সাধারণত সকাল বা রাতে দেওয়া হয়
📌 সেহরির সময় সকালের ওষুধ গ্রহণ করুন
📌 রাতের ওষুধ খাবারেরপর গ্রহণকরুন
 যাঁরা সতর্ক থাকবেন বা রোজা এড়িয়ে যাবেন:
যাঁদের রোজা রাখলে নিয়মিত মাইগ্রেনের অ্যাটাক বেড়ে যায়, তাঁদের রোজা না রাখাই ভালো
দীর্ঘক্ষণ পানি শূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) বা অনিয়মিত ঘুম মাইগ্রেনের প্রধান ট্রিগারগুলোর একটি। তাই পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে
🦴 স্পন্ডাইলাইটিস ও কোমর ব্যথার রোগীদের জন্য রোজার উপকারিতা
📌 রোজা ওজন কমাতে সহায়ক, যা কোমর ও ঘাড়ের ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
📌 সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে রোজা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে
রোজার সময় যা মেনে চলবেন:
ভাজা পোড়া ও অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
ইফতারে সহজপাচ্য ওস্বাস্থ্যকর খাবার খান, যা গ্যাস বা হজমের সমস্যা তৈরি করবে না
প্রচুর পানি পান করুন, যাতে শরীরে পানি শূন্যতা না হয়
💊 ওষুধ গ্রহণের নিয়ম:
📌 রাতে খাবারের পর ওষুধ নিন
📌 সেহরির সময় ও নির্ধারিত ওষুধ গ্রহণ করুন
📌 ব্যথার ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
🕌রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যেন কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয়
আপনার স্নায়ুজনিত কোনো রোগ বা NIMHANS, Bangalore সম্পর্কিত তথ্যের জন্য পরামর্শ নিতে ডা. এম এম সামিমের সাথে যোগাযোগ করুন – 📞৯০৩৮৯০২৬৭৭

সুস্থ থেকে রোজা পালন

রমজান মাসে
সুস্থ থেকে রোজা পালন

ইসলামী ক্যালেন্ডারের নবম মাস রমজান হল ধৈর্য, ত্যাগ ও আত্মসংযমের মাস। রমজান মাসে, মুসলমান ভাই বোনেরা ভোরে সেহরি খেয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন। রমজান মাসে সুস্থ থাকতে রোজা পালনে কিছু নিয়মাবলী অনুসরণ করুন যা স্বাস্থ্য উন্নত করবে-জানালেন মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ কলিমুজ্জামান মোল্লা

সেহেরিতে (ভোরের খাবার) কি খাবেন?
সেহেরি এড়িয়ে না গিয়ে, হালকা সেহেরি খান। সেহেরি না খেলে রোজার সময়কাল দীর্ঘায়িত হবে ফলে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যেতে পারে ও অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। উচ্চ আঁশযুক্ত সিরিয়াল, ফল বা সবজি ও প্রোটিন খাবার খাওয়া উচিত। প্রোটিনের জন্য দুধ, দই খেতে পারেন। সেহেরিতে পর্যাপ্ত জল পান করে নিজেকে হাইড্রেট করুন। ভোরে কফি এবং চা যতই লোভনীয় হোক না কেন তা এড়িয়ে চলা উচিত।
ইফতারের (সূর্যাস্তের পরের খাবার) সময় কি খাবেন?
জল ও খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করুন। খেজুর ফাইবার ও ক্যালোরির বড় উৎস। নিজেকে রিহাইড্রেট করার চেষ্টা করুন। রিহাইড্রেটের জন্য জলই শ্রেষ্ঠ বিকল্প। ডায়াবেটিস রোগীরা লেবু জল পান করতে পারেন। চিনিযুক্ত এবং ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি ডিহাইড্রেশন করে। ভাজা, নোনতা খাবার এড়িয়ে চলুন। গোটা শস্য, ফলমূল খান। তরমুজ এবং সবুজ সালাদ জাতীয় হাইড্রেটিং খাবার খান। অনেকে ইফতারেই অন্য সময়ের তুলনায় অধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে নেয়। ইফতারে অতিরিক্ত না খাওয়া উচিত। ইফতারের অতিরিক্ত খাবার শরীরের ক্ষতি করতে পারে এবং হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
রাতের খাবারে কি খাবেন?
*ডি-হাইড্রেশন থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত জল পান করুন।
*অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ভাজা, খুব বেশি মিষ্টি, চর্বিযুক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, মাখনযুক্ত পেস্ট্রি এড়িয়ে চলা উচিত।
*খাবারে লবণ কম পরিমাণে খান।
*শাকসবজি ও ফলমূল খান বেশি বেশি করে।
*স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের জন্য  চর্বিহীন মাংস, মাছ, পনির, দুধ ও ডিম খেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর প্রোটিন আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি সরবরাহ করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখা যাবে?
কিছু ডায়াবেটিস রোগীর রোজার ফলে সমস্যা হতে পারে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণত রোজা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসিমিয়া, গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিসের মত জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর ওষুধের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে, রোজা রাখতে পারেন। তবে ঔষধের সময় ও ডোজ নির্ধারনে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা না রাখা উচিত। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা গেলে বাড়িতে গ্লুকোমিটারে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখা উচিত।
হৃদরোগীদের কি রোজা রাখা যাবে?
আনস্টেবল এনজাইনা, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, ক্রিটিক্যাল অওরটিক স্টেনোসিস, HOCM, সিভিয়ার পালমোনারি হাইপারটেনশন, অ্যারিথমিয়ার  রোগীদের রোজা না রাখা উচিত। স্থিতিশীল হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রোজা রাখা নিরাপদ। হৃদরোগযুক্ত রোগীদের রোজা রাখার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কিডনি রোগীদের রোজা রাখা যাবে?
ক্রনিক কিডনি রোগ (CKD) ও নেফ্রোটিক-রেঞ্জ প্রোটিনিউরিয়া রোগীদের রোজা না রাখা উচিত। কিডনির কার্যকারিতা স্থিতিশীল থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখতে পারেন। উচ্চ পটাসিয়াম এবং ফসফরাসযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
থাইরয়েড রোগীদের রোজা রাখা যাবে?
হাইপোথাইরয়েড রোগীরা রমজান মাসে নিরাপদে রোজা রাখতে পারেন। রোজা রাখলে থাইরয়েড গ্রন্থিতে হরমোনের মাত্রা কমে। তাই TSH এর মাত্রা অল্প বৃদ্ধি পায়, তবে রমজানের পরে TSH স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। খালি পেটে লেভোথাইরক্সিন খান। ইফতারে লেভোথাইরক্সিন খেয়ে ১ ঘন্টা পরে খাবার খেতে পারেন। সেহেরির ১ ঘন্টা আগে অথবা ইফতারের ৩-৪ ঘন্টা পরে লেভোথাইরক্সিন খাবেন।
হালকা থেকে মাঝারি হাইপারথাইরয়েডিজমের রোগী রোজা করতে পারেন। বেশি লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের ডিহাইড্রেশন, ডায়রিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন থাকতে পারে। তাদের উচিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা। রোজা রাখা অবস্থায় হাইপারথাইরয়েডিজম রোগীদের তেজস্ক্রিয় আয়োডিন থেরাপি ও অস্ত্রোপচারের মতো চিকিৎসার গুলি এড়িয়ে চলা উচিত।
রোজা রাখা অবস্থায় কি করবেন?
*তাপমাত্রা বেশি থাকলে রোদ এড়িয়ে ঠান্ডা এবং ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকুন। রোদে থাকলে হালকা ঢিলেঢালা এবং হালকা রঙের পোশাক পরুন।
*মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া উচিত।
*ধূমপান,তামাক এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। যেহেতু রমজান মাসে এগুলি থেকে ১৫ -১৬ ঘন্টা বিরত থাকেন। তাই রমজানই হল এই কুঅভ্যাসগুলো ত্যাগ করার উপযুক্ত সময়।
*একটিভ থাকতে দিনের যে কোনও সময় ব্যায়াম করুন। দিনের বেলায় তীব্র ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন কারণ আপনার ডিহাইড্রেশন বেড়ে যেতে পারে। ইফতারের আগে হাঁটা বা স্ট্রেচিংয়ের মতো কম থেকে মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করা যেতে পারে।
*ভোরে সেহেরির জন্য ঘুম থেকে ওঠার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই ঘুমের রুটিন তৈরি করুন। সুস্থ থাকতে দিনে ৭ - ৮ ঘন্টা ঘুম জরুরী।                 যোগাযোগ: ৯২৩৯০৩৩৩০৩/৯২৩৯০৪৪৪০৪

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫

ভারতে আকুপাংচার চিকিৎসার পথিকৃত
ডা: বিজয় কুমার বসুর ১১৩ তম জন্মদিন
জাতীয় আকুপাংচার দিবস হিসাবে উৎযাপন

১লা মার্চ
, ২০২৫ তারিখে, ইন্ডিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন (ইরিম) হাওড়া এবং আকুপাংচার সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (আসা) ইন্ডিয়া যৌথভাবে ভারতের আকুপাংচারের প্রবক্তা ডঃ বিজয় কুমার বসুর ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছে। তিনি ১৯১২ সালের ১লা মার্চ বাংলাদেশের বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে, একজন তরুণ ডাক্তার হিসেবে, তাকে প্রতিবেশী দেশের সংগ্রামের সাথে দাঁড়াতে এবং শ্রমজীবী মানুষের সেবা করার জন্য চীনে ভারতীয় মেডিকেল মিশনের পাঁচ সদস্যের দলে (১৯৩৮-৪৩) যোগদানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডাকা হয়েছিল। চীনে পৌঁছানোর পর, মিশনের ডাক্তাররা জীবন-মরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হন কারণ তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে সেবা করতে হয়েছিল। সেই সময়ে, চীনা জনগণ জাপানের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। এই মিশন ভারত ও চীনের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করে একটি অনন্য ইতিহাস তৈরি করেছিল। ১৯৪৩ সালে ডা:বসু ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৫৮ সালে তাকে আকুপাংচার শেখার জন্য চীনে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তিনি তার দেশের জনগণের সেবা করার জন্য ভারতে ফিরে আসেন। আকুপাংচারের মাধ্যমে তিনি এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন যে এই ধরনের কম খরচের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী উপকারী প্রভাব ফেলে। ১৯৫৯ সালে, ডা: বসু ভারতে আকুপাংচার পুনঃপ্রবর্তন করেন (প্রাচীন ভারতে, সুচি-ভেদ চিকিৎসা প্রচলিত ছিল কিন্তু পরে কিছু উপজাতি সম্প্রদায় ছাড়া এটি অপ্রচলিত হয়ে পড়ে)। তিনি ডা: কোটনিস মেমোরিয়াল কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন যা ভারতের শহরতলির এলাকা এবং প্রত্যন্ত গ্রামে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই চিকিৎসার উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। খোলা মনে, তিনি নতুন প্রজন্মের মেডিকেল ছাত্র এবং অনুশীলনকারীদের কাছে আকুপাংচার সম্পর্কে তার জ্ঞান ছড়িয়ে দেন ।
পশ্চিমবঙ্গ হাওড়ার ইরিম ভবনে এই অনুষ্ঠানটি  দুটি অধিবেশনে বিভক্ত ছিল: দিবসটির তাৎপর্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এটি শুরু হয়েছিল, তারপরে ইরিম এবং আসা ইন্ডিয়ার উপদেষ্টা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা ডা: বিজয় কুমার বসু এবং তার কাজ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। পরবর্তী অধিবেশনটি ছিল "দৈনন্দিন রোগের জন্য আকুপাংচার চিকিৎসা" শীর্ষক একটি ধারাবাহিক চিকিৎসা শিক্ষা (সিএমই) প্রোগ্রাম, যেখানে আকুপাংচারের শিক্ষার্থী এবং অনুশীলনকারীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল একটি দল-ভিত্তিক আলোচনা, যা প্রবীণ চিকিত্সক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। অনুষ্ঠান শুরুর আগে উপস্থিত দর্শকরা ডা: বসুর ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। প্রথম অধিবেশনটি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মোডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কারণ বেশিরভাগ উপদেষ্টা ভারত এবং বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যোগ দিয়েছিলেন। ডঃ বসুর অন্যতম সিনিয়র ছাত্র ডা: দেবাশিসবক্সী অনলাইন এবং অফলাইন দর্শকদের মধ্যে একটি পরিচিতি শুরু করেছিলেন এবং অনলাইন দিকটি তদারকি করছিলেন। ইরিমের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি এবং আসা ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডা: সুজাতা পাল পুরো আলোচনার সমন্বয় করেন।
প্রথম অধিবেশনে প্রবীণ প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী অধ্যাপক (ডঃ) রাম গোপাল, সকলকে শুভেচ্ছা জানান এবং ডা: দেবাশিস বক্সী, ডা: চন্দনা মিত্র এবং ডা: মৃগেন্দ্রনাথ গান্তাইতকে ধন্যবাদ জানান, যারা ডঃ বসুর ছাত্র এবং ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে আকুপাংচার অনুশীলন করে আসছেন। তিনি সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিটি আকুপাংচার অনুশীলনকারীকে অনুরোধ করেন।
ডা: এস.এন. পান্ডে, বর্তমানে নাগাল্যান্ড-এর আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও ভারতের প্রবীণতম প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, শ্রোতাদের সাথে তার মতামত ভাগ করে নেন। তিনি ভারতীয় চিকিৎসা মিশনের গুরুত্ব এবং কোন পরিস্থিতিতে ডা: বসু এবং দলের অন্যান্য সদস্যরা চীনা জনগণের সেবা প্রদান করেছিলেন সে সম্পর্কে বলেন। তিনি ডা: বসুর কাজকে একটি বিশাল বৃক্ষের সাথে তুলনা করেন, যা সারা ভারতে তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। ইরিম এবং আসা ইন্ডিয়া সর্বদা তাঁর কাজের উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তিনি আরো বলেন যে ডা: বসু একটি বীজ বপন করেছেন এবং সময়ের সাথে সাথে, এটি একটি বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে এবং তাই, আকুপাংচারের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি ব্যক্তি এবং সংস্থার এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি পালন করা উচিত। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আকুপাংচার, একটি স্বাধীন ব্যবস্থা হিসেবে, ভারত সরকারের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। শ্রোতাদের তিনি জানান যে, একজন চ্যান্সেলর হিসেবে, তিনি নাগাল্যান্ডের আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের মধ্যে আকুপাংচার প্রবর্তনের চেষ্টা করছেন।
পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির বিশিস্ট নেচারোপ্যাথ ডা: সরজু শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান এবং অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য ইরিমকে ধন্যবাদ জানান। আইআইটি, খড়গপুরের স্কুল অফ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রাক্তন অধ্যাপক এবং প্রধান ডঃ জ্যোতির্ময় চ্যাটার্জী আকুপাংচার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডা: বসু এবং তার ছাত্র - ডা: মিত্র, ডা: বক্সী এবং ডা: গান্তাইত এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং ইরিম-এর সিনিয়র মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যাদের তিনি তাঁর শিক্ষক হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি আরও বলেন যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সন্ধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনুসন্ধান এবং কৌতূহল কলকাতা মেডিকেল কলেজের (এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিকেল কলেজ) একদল তরুণ ডাক্তারকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাইরে যেতে এবং একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি গ্রহণ করতে পরিচালিত করেছে, যাতে তারা মানুষকে আরো ভালোভাবে চিকিৎসা করতে পারে।  এর ফলে ৪৪ বছরের আগে ইরিম প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে আধুনিক চিকিৎসার প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরা আকুপাংচার অনুশীলন করতেন এবং আয়ুর্বেদ, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, যোগব্যায়ামের জ্ঞানও অন্তর্ভুক্ত করতেন এবং সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি অগ্রণী উদাহরণ স্থাপন করতেন। এর পাশাপাশি, ইরিম গবেষণার উপরও মনোনিবেশ করেছিল, যা ছাড়া কোনও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি এগিয়ে যেতে পারে না। দীর্ঘ যাত্রা জুড়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে তার লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ ইরিমের একটি প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। ডঃ চ্যাটার্জী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যসেবা দৃষ্টান্ত এবং কীভাবে এটি চিকিৎসার ৪পি - ভবিষ্যদ্বাণীমূলক, প্রতিরোধমূলক, ব্যক্তিগতকৃত, অংশগ্রহণমূলক - এর উপর জোর দেয় সে সম্পর্কেও কথা বলেছেন। ৪পি মডেল হল আধুনিক ক্লিনিকাল চিকিৎসার ভিত্তি এবং ৪পি মডেল বিবেচনা করার সময়, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আরেকটি পি- 'উত্তরণ' কেও বিবেচনা করা উচিত। যদি আমরা স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত 'উত্তরণ' -এর কথা বিবেচনা করি, তাহলে আমরা জেনেটিক ফ্যাক্টরের বাইরেও একাধিক প্রভাবশালী কারণ বিবেচনা করব, যা একত্রিত হয়ে একজন মানুষের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। প্রতিটি মানুষ অনন্য এবং তাই, রোগের লক্ষণগুলির প্রকাশও ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। অতএব, এই দিকটি মানব স্বাস্থ্যকে আরও সামগ্রিকভাবে বোঝার জন্য একটি পদক্ষেপ।
মধ্যপ্রদেশের ভোপাল নিবাসী, আসা ইন্ডিয়ার সহ-সভাপতি বিখ্যাত আয়ুর্বেদ এবং আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ, ডা: রশমি  ঝা, ইরিমের ছাত্র-ছাত্রী, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সিনিয়র ফ্যাকালটিদের শুভেচ্ছা জানান। ডা: ঝা চীনা আকুপাংচার সম্পর্কে গভীরভাবে ধারণা অর্জনের জন্য চীনা ভাষা শেখার তার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে ভাগ করে নেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার গুরুত্ব এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষাকে  ভালোভাবে গ্রহণ করে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আহ্বান রাখেন।
ইরিমের  সভাপতি শ্রী অরবিন্দ বিশ্বাস পরবর্তী বক্তা ছিলেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে অনেক অগুরুত্বপূর্ণ দিন উদযাপন করা হয় এবং অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে ডা: বসুর জন্মদিন, যা আমরা 'জাতীয় আকুপাংচার দিবস' হিসেবে পালন করছি, সেইভাবে পালিত হয় না। তাই, ডা: বসুর অবদান জাতীয়ভাবে আরও বৃহত্তর পরিসরে স্মরণ করা এবং উদযাপন করা উচিত। তিনি ইরিমের সাথে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা জানালেন এবং ইরিম একটি সংগঠন হিসেবে জন্ম নেওয়ার অনেক আগে থেকেই তিনি ডা: রণজিৎ ঘোষের (ইরিমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন) বন্ধু হিসেবে এই অঞ্চলে আসছেন। শ্রী বিশ্বাস বলেন, ডা: দেবাশিস বক্সী তাঁর চিকিৎসা করেছিলেন এবং একটি মারাত্মক বাইক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদী আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে কীভাবে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন তা আমাদের জানিয়েছেন।
ডা: বসুর আরেকজন সিনিয়র ছাত্রী এবং ইরিমের অন্যতম সিনিয়র ফ্যাকালটি ডা: চন্দনা মিত্র তাঁর মূল্যবান মন্তব্য দিয়ে এই অধিবেশনটি শেষ করেছেন। তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসের ছাত্রী থাকাকালীন তার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেছেন। তিনি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেছেন যেখানে সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিছানা পেতে কষ্ট পাচ্ছিলেন; সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের উপর প্রচণ্ড চাপের কারণে রোগীদের ভর্তি করা খুবই কঠিন ছিল। একজন ছাত্রী হিসেবে, তিনি তত্কালীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন অসুবিধা প্রত্যক্ষ করছিলেন। এই মানুষেরা চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভাবেননি এবং তারা ডাক্তারদের ঈশ্বর বলে মনে করতেন। ঘটনাক্রমে, তিনি এবং তার বন্ধুরা আকুপাংচারের সাথে পরিচিত হন কারণ মেডিকেল কলেজের তাদের কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী আকুপাংচার দ্বারা চিকিৎসা করাতেন। তাদের কাছ থেকে, ডা: মিত্র এবং তার বন্ধুরা ডা: বসুর সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তার সাথে দেখা করতে যান। ইতিমধ্যে, তারা চীনা নিবন্ধ, লিফলেট এবং ম্যাগাজিন সহ বিশ্ব মিডিয়া রিপোর্টের মুখোমুখি হন যেখানে তারা জানতে পারেন যে কীভাবে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় চীনাদের স্থানীয় চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। ভারত এবং চীন উভয়েরই ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে (যথাক্রমে আয়ুর্বেদ এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা)। ভারতে, চরক, সুশ্রুতের জ্ঞান ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা দমন করা হয়েছিল এবং একইভাবে, চীনে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি আদিবাসী চিকিৎসা অনুশীলনকারীদের দমন এবং অপরাধী করে তুলেছিল। চীনা নিবন্ধগুলি পড়ার সময়, ডা: মিত্র এবং অন্যান্যরা আকুপাংচার সম্পর্কে জানতে পারেন। অবশেষে, তারা বার্জার্স রোগে আক্রান্ত একজন অত্যন্ত গুরুতর রোগীর চিকিৎসার জন্য ডা: বসুর সাথে দেখা করেন। ধীরে ধীরে, তারা ঐতিহ্যবাহী গুরু-শিষ্য পরম্পরার মতো তার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে শুরু করেন।
চীনে, স্থানীয় লোকেদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি ঐতিহ্য রয়েছে যারা সম্প্রদায়ের সেবায় আগ্রহী। চীনা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অ্যালোপ্যাথি এবং ঐতিহ্যবাহী ঔষধ উভয়ই প্রয়োগ করে। ১৯৭৮ সালে, চীন সফরকালে, ডা: মিত্র এবং তার সহকর্মীরা লক্ষ্য করেছিলেন যে বড় বড় শহরাঞ্চলের হাসপাতালগুলিতেও, পোড়া রোগীদের সারা শরীরে ভেষজ ঔষধের প্যাক ঢেকে রাখা হয়। হাসপাতালগুলিতে আকুপাংচার, ভেষজ এবং পশ্চিমী ঔষধ ছিল; সবকিছুই একই ছাদের নীচে অনুশীলন করা হত। ডা: বসুর একটি সমন্বিত ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা ছিল। তাছাড়া, চীনে এটি কেবল চিকিৎসা পেশাদারদের জন্যই ছিল না, এমনকি সাধারণ মানুষও সমাজ সেবা করার জন্য চিকিৎসা শিখতে এবং যোগ দিতে পারতেন। ভারতে, ডা: বসু সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষা দিতে আগ্রহী ছিলেন, যাতে তারা চিকিৎসার প্রয়োজনের সময় সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে পারেন। ওষুধের উপর নির্ভরতা এবং আধুনিক চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ডা: মিত্র এবং তার বন্ধুদের এমন একটি চিকিৎসার সন্ধান করতে পরিচালিত করেছিল যা সাধারণ মানুষকে আরও সন্তোষজনকভাবে সাহায্য করবে। পরবর্তীতে, যোগব্যায়াম, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ভেষজ চিকিৎসা, খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মতো অন্যান্য ধরণের ওষুধবিহীন চিকিৎসার গুরুত্ব তার চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হয়ে ওঠে। তিনি ড: জ্যোতির্ময় চ্যাটার্জির মতামতের উপর জোর দিয়ে বলেন, যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি পরীক্ষা করার সময় মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাধারণ ধারণা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা উভয়ই বিবেচনা করা হয়। ডা: মিত্র তার বক্তব্যের শেষে পরবর্তী অধিবেশন অর্থাৎ "দৈনন্দিন রোগের জন্য আকুপাংচার চিকিৎসা" শীর্ষক সিএমই-এর গুরুত্ব রাখেন।
দৈনন্দিন রোগের জন্য আকুপাংচার চিকিৎসাশীর্ষক সিএমই
এই অধিবেশনে, আকুপাংচারের শিক্ষার্থী এবং অনুশীলনকারীদের সমন্বয়ে গঠিত অংশগ্রহণকারীদের ৩টি দলে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি দলের একজন পরামর্শদাতা ছিলেন। তাঁরা হলেন: ডাঃ সুজাতা পাল, ডাঃ দেবাশিস বক্সী এবং ডাঃ চন্দনা মিত্র। সদস্যরা এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং আকুপাংচার এবং অ্যালাইড থেরাপির মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা করা কেসগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে, গ্রুপ আলোচনার ফলাফল সকল সিএমই অংশগ্রহণকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে পরের সিএমই তে জ্ঞান বিনিময় অব্যাহত রাখা হবে, যা আপাতত ৬ মাস পর অনুষ্ঠিত হবে।
উপসংহারে, ডাঃ দেবাশিস বক্সী ভারতে একটি স্বাধীন ব্যবস্থা হিসেবে তাৎক্ষণিক স্বীকৃতির মাধ্যমে আকুপাংচারের সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহারের উপর জোর দেন যাতে একটি নির্দিষ্ট কোর্স পাঠ্যক্রম (স্বাধীন কাউন্সিল / স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে) দ্বারা স্ট্যান্ডার্ড পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ পরিচালিত হতে পারে এবং বর্তমানের সকল শ্রেণীর আকুপাংচারিস্টদের আইনি স্বীকৃতি দেওয়া যায়।

Featured Post

ডায়াবেটিস,হাইপারটেনশন রোজা রাখার উপায়

        ডায়াবেটিস ,   হাইপারটেনশন       রোজা রাখার উপায় ডাঃ সেখ হাম্মাদুর রহমান কনসালট্যান্ট, এন্ডোক্রিনলজি এবং ডায়াবেটিস বিভাগ, মেডিকা হা...