গুরুপাক খাওয়া বেশি হয়েছে!
বেশি করে জল-ফল খান, সঙ্গে শারীরিক কসরৎ বাড়ান
বেশি করে জল-ফল খান, সঙ্গে শারীরিক কসরৎ বাড়ান
ইফরা আহমেদ, ব্যারিয়াট্রিক নিউট্রিশনিস্ট
ইফরা আহমেদ |
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে অনাবিল আনন্দ।
আর এই খুশি অনাবিল আনন্দ খাওয়া ভুরিভোজ
ছাড়া যেন পূর্ণতা পায় না। তাই ঈদে সকলের বাড়ীতেই কমবেশি তৈরী হয় সেমাই,
পরোটা,লাচ্চা, বিরয়ানি, পোলাও, মাংসের নানারকম পদ ইত্যাদি। কোরবানির ঈদে খাওয়া মাত্রাও
থাকে আরো বেশি।
নিজের
বাড়িতে তো বটেই, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে গেলেই খেতে হয় মুখরোচক এইসব খাবার।
আর কোরবানির ঈদের অন্যান্য খাবারের
সঙ্গে মূল আয়োজন হলো মাংস, এবং মাংসের তৈরি নানারকম পদ। ফলে প্রচুর পরিমানে খাওয়া দাওয়া হয় এই
সময়। নিজের শরীরের ফিটনেসের দিকে কোন রকম খেয়াল না রেখেই চলতে থাকে খাওয়াদাওয়া।
যে খাবারগুলো খাওয়া বা পরিবেশিত হয় সেগুলো খুবই মুখরোচক হয় এবং রিচ-ও হয়। যা
শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। তবুও আমরা খাই। খুশির আনন্দে ভুলে যায় আমরা শরীরের
কথা। তবে এ সময়ে কি পরিমাণ খাবার খেলে শরীরে ভালো রাখা যায় তা জেনে নেওয়া যাক।
কোরবানি
ঈদে মাংসের ছড়াছড়ি,
তাই মাংস খাওয়ার লোভ সামলানো মুশকিল। মাংসে প্রচুর পরিমানে ফ্যাট
থাকে। তাই মাংস খাবার সময় নিজেকে সংযত করুন এবং পরিমিত আহার করুন। এতে শারীরিক
কোন সমস্যার হাত থেকে অন্তত রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
মাংসের চাপ, কাবাব এর ছোট ছোট পিস খাওয়া যেতে
পারে। এইসব তৈরিতে বাইরে থেকে বেশি পরিমানে তেল ব্যবহার করবেন না। এমনিতেই এই মাংস
রিচ। মাংসে প্রোটিন, ফ্যাট প্রচুর পরিমানে থাকে। ১০০ গ্রাম মাটন এ ৩১.১ গ্রাম
ফ্যাট থাকে। তার সঙ্গে যদি আরও তেল, ঘি দেওয়া হয় তাহলে সেটা আরও মারাত্মক হয়ে যেতে
পারে। এমনিতেই বেশি চর্বি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। যতটুকু সম্ভব মাংসের
চর্বি বাদ দিয়েই খাওয়া ভালো। মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খান, টাটকা সবজি
পাকস্থলীকে সাবলীল রাখে। মাংসে তেল বা ঘিয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিন, ভুনা মাংসের বদলে
শুকনো কাবাব খেলে অসুবিধা হবার সম্ভাবনা থাকে না। কাবাব- ড্রিপ ফ্রাই কাবাব
একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। গ্রিল কাবাব খাওয়া যেতে পারে। ১-২ পিস। এছাড়া ভেজিটেরিয়ান কাবাব খাওয়া যেতে পারে। যথাসম্ভব তেল যোগ না করেই। খুসকা পোলাও-কাবাব ডায়াবেটিস, গ্যাসটিক, সিওপিডি রোগীদের পক্ষে মারাত্মক।
একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। গ্রিল কাবাব খাওয়া যেতে পারে। ১-২ পিস। এছাড়া ভেজিটেরিয়ান কাবাব খাওয়া যেতে পারে। যথাসম্ভব তেল যোগ না করেই। খুসকা পোলাও-কাবাব ডায়াবেটিস, গ্যাসটিক, সিওপিডি রোগীদের পক্ষে মারাত্মক।
এইসময়
বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের পরটা তৈরি হয়। ডিফ ফ্রাই পরটা তৈরিতে প্রচুর পরিমানে তেল
ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পরাটাতে প্রচুর পরিমানে ফ্যাট থাকে। একটা পরটায় ৩০-৩৫
গ্রাম এরও বেশি ফ্যাট থাকে। কিন্তু আমাদের ফ্যাট এর প্রয়োজন হয় ৩০ গ্রাম এর মত। এই ধরণের ডিফ ফ্রাই পরটা
হেলথি এবং আন হেলথি উভয় ব্যক্তির পক্ষেই ক্ষতিকারক। তাই পরাটা তৈরির সময় যথাসম্ভব
কম তেল ব্যবহার করুন।
ইদ তিন দিন
ধরে পালন করা হয়। আর এই তিনদিন ধরেই যদি এধরণের আনহেলথি খাবার খাওয়া যায় তাহলে তো
মারাত্মক ব্যাপার। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, গ্যাসটিক ও সিওপিডি তে ভুগছেন। বিরয়ানি,
মুগল বিরয়ানী, হায়দ্রাবাদী বিরয়ানি, পরটা, চাপ, কাবাব খাওয়া কোন ভাবেই তো আর
এড়ানো যেতে পারে না। একদিন বা দুদিন বেশি খেতে যদিও খুব বাধা নেই, তবুও খাওয়া উচিত
রয়ে সয়ে, বুঝে-শুনে। বিরিয়ানি, পোলাও,মাংস
ইত্যাদি গুরুপাক খাবারের সঙ্গে সঙ্গে
প্রচুর পরিমানে সালাডও খান। সালাড খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়া প্রতি বেলার
খাবারের তালিকায় অবশ্যই বেশি বেশি পরিমানে সবজি রাখুন।
আমরা জানি
এটা শরীরের পক্ষে ঠিক নয় তবুও খাওয়াটাকে আটকানো সম্ভব নয়। তবে ডায়াবেটিস,
গ্যাসটিক, হার্টের পেশেন্টের জন্য কম তেল দিয়ে পরাটা বানানো যেতে পারে। চর্বি কম
থাকা মাংস এবং কম তেল দিয়ে কাবাব বানালে ১-২ পিস খাওয়া যেতে পারে। এদের আরও বেশ
সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলতে হবে। প্রয়োজনে হাটতে হবে। হৃদরোগীদের
বেশি হাটা ঠিক নয়।
বয়স্কদের
বেশি মাংস খাবার ব্যাপারেও সচেতন থাকা দরকার। বেশি মাংস খেলে তা পরিপূর্ণভাবে হজম
করতে অনেক সময় লাগতে পারে। এতে নানারকম সমস্যা হতে পারে। মাংসে তেল বা চর্বি যেন
কম থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার।
এইসব গুরুপাক খাবার খেলে কোষ্টিকাঠিন্য হবেই। তাই বেশি করে জল, ফল খতে হবে। তাহলে এক-দুদিনের খাওয়াতে সেরকম কোন সমস্যা হবে না। বেশি মাংস খাওয়া হয়ে গেলে দিনে সবজি, সালাড (শশা,গাজর, বীট), ফল খেয়ে ব্যালান্স রক্ষা করুন। সকালে উঠে হাঁটা চলা করুন, শরীর চর্চা করুন।
এইসব গুরুপাক খাবার খেলে কোষ্টিকাঠিন্য হবেই। তাই বেশি করে জল, ফল খতে হবে। তাহলে এক-দুদিনের খাওয়াতে সেরকম কোন সমস্যা হবে না। বেশি মাংস খাওয়া হয়ে গেলে দিনে সবজি, সালাড (শশা,গাজর, বীট), ফল খেয়ে ব্যালান্স রক্ষা করুন। সকালে উঠে হাঁটা চলা করুন, শরীর চর্চা করুন।
গুরুপাক খাওয়া বেশি হয়ে গেলে প্রচুর পরিমানে জল,
ফল খান। বেশি পরিমানে প্রোটিন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবেই হবে। তাই মৌসুমি ফল, লেবুর
সরবত, ফলের রস, ডাবের জল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। জলে
পুদিনা, লেমন মিশিয়ে রাখুন, ওটায় সারাদিন খেতে থাকুন। এতে শরীরের ট্রক্সিন বাইরে
বের হয়ে যাবে কোষ্ঠকাঠিন্য কমিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে হালকা ব্যায়াম বা বেশ কিছুক্ষণ
হাঁটাহাঁটি করুন তাতে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি কমাতে সাহায্য করবে। এইসব নিয়ম মেনে চললে শরীর সুস্থ ও
স্বাভাবকি থাকবে এবং বকরিদ আনন্দময়ক হবে।
সাক্ষাৎকারঃ ওসিউর রহমান ,৭৯৮০১৫৫২৭৭
No comments:
Post a Comment