২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হৃদয় দিবস
স্বাস্থ্যকর অভ্যাসেই রেহাই মিলবে হৃদরোগ থেকে
ডাঃ সৌম্য পাত্র
কনসালট্যান্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট
মেডিকা সুপারস্পেশালিটি
হসপিটাল
১. হৃদরোগ কি
হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হল হার্ট এর যেসব রক্তনালীগুলো দিয়ে রক্ত সরাবরাহ হয় তার ব্লক হওয়া। এটা সময় মত চিকিৎসা না করলে স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে হার্ট এর মাংসপেশী এবং হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। তাতে ভবিষ্যতে হার্ট ফেলিওর জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. বুকে ব্যথা মানেই কি হৃদরোগ!
হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হল হার্ট এর যেসব রক্তনালীগুলো দিয়ে রক্ত সরাবরাহ হয় তার ব্লক হওয়া। এটা সময় মত চিকিৎসা না করলে স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে হার্ট এর মাংসপেশী এবং হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। তাতে ভবিষ্যতে হার্ট ফেলিওর জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. বুকে ব্যথা মানেই কি হৃদরোগ!
সমস্ত বুকের
ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক নয়। ইমার্জেন্সিতে যতজন বুকের ব্যথা নিয়ে আসেন তার ১০
শতাংশ হয় হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু বুকের ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখানো উচিত।
৩. কি কি কারণে এটা হতে
পারে
হার্ট
অ্যাটাক এর কোন নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। তবে অনেকগুলো রিক্স ফ্যাক্টরস আছে যা সম্মলিত
ভাবে আমাদের হার্ট অ্যাটাক করে তার মধ্যে- জেনেটিক বা জিনগত, ধূমপান, শরীর চর্চা
বা শারীরিক ভাবে কসরৎ এর অভাব, খাদ্য তালিকাগত কুঅভ্যাস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, স্থূলতা
এবং পারিবারিক চাপ এবং বিষন্নতা হার্ট অ্যাটাক এর জন্য দায়ী।
যাদের
ক্ষেত্রে উপরোক্ত রিক্স ফ্যাক্টরগুলো বেশি থাকবে তাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক
হবার সম্ভাবনা ও বেশি থাকবে।
৫. মহিলা বা পুরুষ কাদের
এটা বেশি হয়
৬০ বছর এর
নিচে এবং ৬০ বছরের উপরে মহিলাদের বেশি দেখা গেলেও সামগ্রিক ভাবে এটা প্রায় একই রকম
থাকে। মহিলা বা পুরুষ কেউই হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পাবেন না, যদি উপরোক্ত রিক্স
ফ্যাক্টরগুলো থাকে। মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক এর সংখ্যাটাও আজকাল বাড়ছে এবং সেটা অর্থনৈতিক
ভাবে পিছিয়ে পড়া থেকেই।
৬. কোন বয়সে এটা বেশি হয়
যদিও আগে
হার্ট অ্যাটাক একটু বেশি বয়সেই হত। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে তাতে হার্ট অ্যাটাক হওয়ারর
প্রবণতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও বেশি করে দেখা দিচ্ছে। এখন প্রতি ৪ জন হার্ট
অ্যাটাক এর রোগীর মধ্যে একজন অবশ্যই ৪০ এর নিচে এবং দিন দিন সংখ্যাটা বাড়বে।
৭. পৃথিবীতে/ ভারতবর্ষ/
পশ্চিমবঙ্গে হৃদরোগ এ আক্রান্ত/ মৃত্যুর সংখ্যা কত
যদিও আমেরিকাতে শেষ ১৫ বৎসরে হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগ
যদিও আমেরিকাতে শেষ ১৫ বৎসরে হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগ
জনিত মৃত্যুর হার কমেছে কিন্তু ভারতে এই সংখ্যা ক্রমগত
বেড়েই চলেছে। ভারতবর্ষে প্রতি বছর শুধুমাত্র হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১.৭ মিলিয়ান লোক। হু এর এক সমীক্ষা
থেকে জানা যায়, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। এই
মুহূর্তে হৃদরোগ জনিত মৃত্যুর (চীন এর থেকেও অনেক বেশি)
কারণে ভারতবর্ষ সবার উপরে আছে।
৮. ভয়াবহ ভাবে বেড়ে চলেছে
এ সমস্যা কেন
এই মহামারীর কারণ হচ্ছে আমাদের জীবনশৈলীর পরিবর্তন,
শারীর চর্চার অভাব,ধূমপান,প্রাত্যহিক মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস
এর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়া ও রক্তে চর্বির পরিমান বেড়ে যাওয়া।
৯. জীবনশৈলীর পরিবর্তন কি
কারণ হতে পারে
আমাদের দৈনিক দ্রুত জীবনযাত্রার মান, ইদুর দৌড়
প্রতিযোগীতার চাপ, ধূমপান, ফাস্ট ফুড, নিয়মিত তৈলাক্ত খাবার
খাওয়া,স্থূলতা,নিয়মিত শরীর চর্চা না করার কারণে হৃদরোগ
ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
১০. দূষিত পরিবশে কি দায়ী
সম্প্রতি এক
সমীক্ষায় দেখা গেছে বায়ু দূষণও দায়ী। উপরন্ত রিক্স
ফ্যাক্টরগুলোর সাথে এই হৃদরোগ এর প্রবণতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে।
১১. আজকাল যুবাদের মধ্যেও এটা হতে দেখা যাচ্ছে কেন
১১. আজকাল যুবাদের মধ্যেও এটা হতে দেখা যাচ্ছে কেন
হৃদরোগ এর সম্ভাবনা দিন দিন যুবকদের মধ্যেও বাড়ছে যেহেতু
আমরা অস্বাস্থ্যকর জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখন হার্ট অ্যাটাক ২০ বছরের নীচেও দেখা যাচ্ছে যা নিঃসন্দেহে খুবই দুশ্চিন্তার কারণ।
১২. বুকে অন্যান্য ব্যথার সাথে হৃদরোগ এর ব্যথা তফাৎ কি
হৃদরোগ এর জন্য যে ব্যথা হয় সেটা সাধারণত বুকে জ্বালা বা
ভারী হয়ে যাওয়ার মত হয়। কোন তীব্র ব্যথা, যেটা অনেকে
বলেন চিন চিন ব্যথা বা ছুচ ফোঁটার মত। সেটা সাধারণত হার্ট
অ্যাটাক এর জন্য হয় না। আর বুকের যে ব্যথা হাঁটাহাটি বা
সিড়ি দিয়েউঠতে গেলে বেড়ে যায় অথবা শ্বাসকষ্টের সাথে হয়
সেটা হার্ট অ্যাটাক এর জন্য হতে পারে।
১৩. হৃদরোগর লক্ষণগুলো
কি কি
হৃদরোগ এর লক্ষণগুলো
হল- বুকে বা গলায় ব্যথা হবে, সেটা হাতের দিকে ছড়াতে পারে। এই ব্যথা হাঁটাহাটি,
বাড়ির কাজ ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বেড়ে যায়। সাথে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। অনেকের আবার
দুপুরে খাবার খেয়ে কাজ করলে বুকের ব্যথা বেড়ে যায়। এগুলো
হলে অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান।
১৪. লক্ষণ দেখা দিলেই
সঙ্গে সঙ্গে কি করা উচিত
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী চিকিৎসককে
দেখান। ই সি জি করান এবং দরকার হলে অবশ্যই হৃদরোগ
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
১৫. কি কি পরীক্ষা
নিরীক্ষা করা উচিত
পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে প্রথমেই একটা ইসিজি অবশ্যই করান।
যদিও ১০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকে ই সি জি স্বাভাবিক থাকতে
পারে। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শমত ইকোকার্ডিওগ্রাফি, ট্রেড
মিল, রক্তে সুগার, রক্তে কোলেস্টরেল, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন,
কমপ্লিট হেমোগ্রাম, থাইরয়েড টেস্ট করাতে পারেন। দরকার
পড়লে করোনারি অ্যাণ্জ্ঞিওগ্রাম করান। যদি কিছু রিক্স ফ্যাক্টর
গুলো থাকে বা মাঝে মাঝেই হার্টে ব্যথা হয় তবে ইনভেসিভ
করোনারি অ্যাণ্জ্ঞিওগ্রাম করতে পারেন। এতেও না হলে সিটি
করোনারি অ্যাণ্জ্ঞিওগ্রাম করান।
১৬. চিকিৎসা কি
চিকিৎসার মধ্যে রক্ত পাতলার জন্য ওষুধ, কোলেস্টরল, প্রেসার
ও সুগার এর জন্য কিছু ওষুধ এবং কিছু হার্টের জন্য ওষুধ
খেতে দেওয়া হয়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতই
এসব ব্যবহার করবেন। অন্যথায় সমস্যা জটিল হতে পারে।
১৭. খাওয়া দাওয়া কি রকম করা উচিত
খাওয়া দাওয়া এর মধ্যে সম্পৃক্ত চর্বি ও
পরিমার্জিত কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়া
উচিত। দিনে অন্ততঃ দুবার ভালো
পরিমানমত ফল ওসবজি খাওয়া উচিত।
খাদ্যতালিকায় মিষ্টির পরিমানও কম থাকা
উচিত। মাছ বা চিকেন খেতে আপত্তি নেই
তবে মশলাযুক্ত না হওয়াই উচিত।
ভাজাভুজি, ক্লোডস ড্রিংক্স ও ফ্রাস্ট ফুড
না খাওয়া উচিত। রেড মিট না খেলেই ভালো হয়। তবে সপ্তাহে
২ থেকে ৩ দিন ডিম খাওয়া যেতে পারে।
১৮. হৃদ যাতে ভালো থাকে/
হৃদরোগ যাতে না হয় –বিশেষজ্ঞ হিসাবে আপনার পরামর্শ।
“প্রতিরোধ সবসময় রোগের চিকিৎসার চেয়ে বেশী ভালো”
(Prevention is always better than cure) তাই হার্ট
ভালো রাখতে শুরুতেই জীবনশৈলীর পরিবর্তন আনতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম (সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটতে হবে)
করতে হবে। ধূমপান ছাড়তে হবে। মানসিক চাপ কমানোর
জন্য যোগা করতে হবে। এছাড়া উপরোক্ত খাদ্যতালিকা মেনে
চলতে হবে। তাহলে সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।
ওসিউর রহমান, ৭৯৮০১৫৫২৭৭
No comments:
Post a Comment