নিউরো-রোগ আক্রান্ত ব্যক্তি
রোজা রাখার নিয়ম ও সতর্কতা
রমজান মাসে রোজা রাখা ইবাদতের
অন্যতম অংশ,
তবে নিউরোলজিক্যাল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কিছু সতর্কতা মেনে
চলা জরুরি। বিশেষত স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, পারকিনসন ডিজিজ, মাইগ্রেন, স্পন্ডিলাইটিস
বা মৃগী রোগ থাকলে রোজার সময় কিছু বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। কলমে-নিউরো বিশেষজ্ঞ, ডা:
এম এম সামিম,
ডি.এম. নিউরোলজি (গোল্ড মেডেলিস্ট), নিমহ্যানস,
বেঙ্গালুরু,এম আর সিপিএসসিই নিউরোলজি,
লন্ডন
গুরুতর নিউরোলজিক্যাল সমস্যায়
রোজা কি নিরাপদ?
যদি কোনো নিউরোলজিক্যাল সমস্যার উন্নতি
না হয় বা অবনতি ঘটে (যেমন—শরীরের দুর্বলতা বাড়তে থাকে), তাহলে রোজা না রাখাই
উত্তম।
চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরি।
নিউরোলজিক্যাল ভাবে সচেতন থেকে
রোজা রাখা
যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল, তাঁরা কিছু সতর্কতা মেনে রোজা
রাখতে পারেন।
মৃগী বা এপিলেপসি:
শেষ ২ মাসে কোনো খিঁচুনি না হলে এবং
ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করলে রোজা রাখা যেতে পারে।
প্রতিদিন
৬-৭ ঘণ্টা গভীর ও পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য, কারণ ঘুম কম হলে খিঁচুনি হওয়ার
ঝুঁকি বাড়ে।
ওষুধের সময় মেনে চলতে হবে:
দিনে ২ বার ওষুধ নিলে
সেহরির সময় (ভোর)
ইফতারের ২ ঘণ্টা পর (রাত, ১০-১২ ঘণ্টার ব্যবধানে)
দিনে ৩ বার ওষুধ নিলে
সেহরির সময়
ইফতারের সময়
ঘুমানোর আগে
দিনে ৪ বার বা তার বেশি ওষুধ
লাগলে
রোজা এড়িয়ে চলাই উত্তম
স্ট্রোক ও রোজা এবিষয়ে আপনার পরামর্শ-
স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের জন্য
রোজা রাখা সম্পূর্ণ ব্যক্তি ভেদে নির্ভরশীল। কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি—
যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল, বিশেষ করে রক্তচাপ
ও রক্তে শর্করার মাত্রা (ব্লাড সুগার) গত কয়েক মাস ধরে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে পারেন।
কিন্তু গত ৩ মাসের মধ্যে স্ট্রোক
হয়ে থাকলে রোজা না রাখাই উত্তম, কারণ এই সময়টি রোগীর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
ওষুধ গ্রহণের সময়সূচি:
রক্তচাপ ও সুগারের ওষুধ:
সেহরির পর
ইফতারের পর
✔রক্ত পাতলা করার ওষুধ ও
কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ:
সাধারণতরাতে খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, সেটাই
অনুসরণ করুন।
✔স্ট্রোকের পর দেওয়া কিছু ভিটামিন:
📌যেকোনো সময় নেওয়া যেতে পারে।
পার্কিনসন রোগী ও রোজা এবিষয়ে
বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনার পরামর্শ-
পার্কিনসন রোগ বা পার্কিনসোনিজম
আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখতে পারেন, এবং কিছু ক্ষেত্রে উপবাস উপকারীও হতে
পারে। তবে
ওষুধ গ্রহণের সময়সূচিও রোগের অবস্থা অনুযায়ী কিছু সতর্কতা নেওয়া জরুরি।
যাঁরা রোজা রাখতে পারেন:
✔ যাঁদের হাত-পা কাঁপে, হাঁটা ধীরগতি হয়ে গেছে, কিন্তু অবস্থা স্থিতিশীল এবং
Levodopa জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাঁদের রোজা
রাখার কারণে গুরুতর কোনো সমস্যা হয় না।
✔ যাঁরা দিনে তিনবার
Levodopa নেন, তাঁরা—
📌 সেহরির সময়
📌 ইফতারের সময়
📌 ঘুমানোর আগে ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
যাঁরা সতর্ক থাকবেন বা রোজা না রাখাই
ভালো:
❌ যাঁদের দিনে তিনবারের বেশি Levodopa
বা অন্যান্য পার্কিনসন ওষুধ প্রয়োজন, তাঁদের রোজা
না রাখাই উত্তম।
❌ যদি রোজা রাখতে চান,
তাহলে নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। Controlled Release (CR) ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় কার্যকারিতা বজায় রাখা সম্ভব হতে পারে।
❌ যাঁরা শয্যাশায়ী বা স্মৃতিভ্রংশে
(ডিমেনশিয়া) আক্রান্ত, তাঁদের রোজা না রাখাই ভালো।
মাইগ্রেন ও রোজা এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসাবে আপনার পরামর্শ-
মাইগ্রেন আক্রান্ত ব্যক্তিদের
জন্য রোজা রাখা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। অনেকের ক্ষেত্রে উপোস
থাকলে মাইগ্রেনের তীব্রতা বেড়ে যায়, আবার অনেকের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলে না।
যাঁরা রোজা রাখতে পারেন:
✔ যাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে যে উপোস
থাকলেও মাথা ব্যথা বাড়ে না, তাঁরা রোজা রাখতে পারেন।
✔ মাইগ্রেন
প্রতিরোধী ওষুধ (Preventive Therapy) সাধারণত সকাল বা রাতে
দেওয়া হয়।
📌 সেহরির সময় সকালের ওষুধ গ্রহণ করুন।
📌 রাতের ওষুধ খাবারেরপর গ্রহণকরুন।
যাঁরা সতর্ক থাকবেন বা রোজা এড়িয়ে
যাবেন:
❌ যাঁদের রোজা রাখলে নিয়মিত মাইগ্রেনের অ্যাটাক
বেড়ে যায়, তাঁদের রোজা না রাখাই ভালো।
❌ দীর্ঘক্ষণ পানি শূন্যতা
(ডিহাইড্রেশন) বা অনিয়মিত ঘুম মাইগ্রেনের প্রধান ট্রিগারগুলোর একটি। তাই পর্যাপ্ত পানি
পান ও নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
🦴 স্পন্ডাইলাইটিস ও কোমর ব্যথার রোগীদের জন্য রোজার উপকারিতা
📌
রোজা ওজন কমাতে সহায়ক, যা কোমর ও ঘাড়ের ব্যথা
কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
📌 সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে রোজা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে
রাখতে সাহায্য করতে পারে।
✅ রোজার সময় যা মেনে
চলবেন:
✔ ভাজা পোড়া ও অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার
এড়িয়ে চলুন।
✔ ইফতারে সহজপাচ্য ওস্বাস্থ্যকর
খাবার খান, যা গ্যাস বা হজমের সমস্যা তৈরি করবে না।
✔ প্রচুর পানি পান করুন,
যাতে শরীরে পানি শূন্যতা না হয়।
💊 ওষুধ গ্রহণের নিয়ম:
📌
রাতে খাবারের পর ওষুধ নিন।
📌 সেহরির সময় ও নির্ধারিত ওষুধ গ্রহণ করুন।
📌 ব্যথার ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে চিকিৎসকের পরামর্শ
নিন।
🕌রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই নিউরোলজিস্টের
পরামর্শ নেওয়া উচিত,
যেন কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয়।
আপনার স্নায়ুজনিত কোনো রোগ বা NIMHANS, Bangalore সম্পর্কিত তথ্যের জন্য পরামর্শ নিতে ডা. এম এম সামিমের সাথে যোগাযোগ করুন –
📞৯০৩৮৯০২৬৭৭।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন