অযথা আতঙ্কিত, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে যায়
ডা. প্রদীপ কুমার দাস
আনলক ওয়ান পর্ব থেকে শুরু হয়েছে অফিস-কাছারি, ব্যাংক -ইনস্যুইরিন্স ও প্রাইভেট সংস্থার কর্মকান্ড। এর আগে লক ডাউন চলাকালীন জরুরী পরিষেবা দিয়ে গেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। কিন্তু পরিস্তিতি এখন বদলে গেছে। দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ফলস্বরূপ ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য জরুরী পরিষেবার কর্মীরা গ্রাহকদের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন। সেই ভয়কে দূরে সরিয়ে দিয়ে সংস্থার কাজকর্মে গতি বাড়ানোর জন্যে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য জরুরী পরিষেবায় নিযুক্ত কর্মীদের এবং সেই সঙ্গে আমজনতার প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন আই এম এ শ্রীরামপূর শাখার সভাপতি ও ব্যাংক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রদীপ কুমার দাস।
ব্যাঙ্ক বা
অন্যান্য জরুরী পরিষেবার নিযুক্ত কর্মীদের কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন
প্রথমতঃ করোনা
সংক্রমণকে আটকাতে হলে মুখে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে,
হাত বারে বারে
সাবান জল দিয়ে ধুতে হবে
কর্মী ও
কাস্টোমারের সঙ্গে ফিজিক্যাল ও স্যোসাল দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
প্রতিটি
কাস্টোমারকে অবশ্যই মুখে মাস্ক লাগাতে হবে, নিরাপদ
দূরত্ব বজায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্মীর সঙ্গে অফিসিয়াল কাজ সারতে হবে দ্রুততার সাথে।
অযথা সময় তিনি নষ্ট করবেন না এই অতিমারির সময়ে।
পরিষেবা
কেন্দ্রে ঢোকার ও বেরোনার সময়ে গেটে যিনি
পাহারাদার রয়েছেন সকলকে হাত স্যানিটাইজ করার উদ্যোগ নেবেন।
বয়স্ক ও
শারীরিকভাবে দুর্বল লোকজনদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁদের কাজটা আগে করে দিতে হবে। এতে
উভয়েই উপকৃত হবেন।
প্রত্যেকটি
কর্মী যাতে মানবিক আচার আচরণ করেন ও অযথা কালক্ষেপ না করে দ্রুততার সঙ্গে কাজগুলো
যাতে করে সেদিকে নজর দিতে হবে। এই সংকটময় মুহুর্তে কাস্টোমাররা উপকৃত হবেন। এরফলে
সেই শাখা ব্যাংকের প্রতি বা সংস্থার প্রতি মানুষের আস্হা বাড়বে ও সেই সংস্থা
আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবে।
ব্যাঙ্কের ক্যাশ
কাউন্টারে যিনি বসেন তাঁকে অন্যান্যদের চেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। টাকা জমা
নিচ্ছেন বা যিনি টাকা কে টাকা দিচ্ছেন তাঁরা ও কাস্টোমারেরা যাতে হাতে গ্লাভস পরে
লেনদেন করেন সেদিকে লক্ষ্য রাখাটা দরকার। প্রত্যেকবার লেনদেনের পরে গ্লাভস পরা হাত
স্যানিটাইজ করাটা প্রয়োজন।
কাজ শুরু
হওয়ার আগে ব্যাংকের বা সংস্থার মেঝে, চেয়ার -টেবিল, আসবাবপত্র
লাইজল দ্রবনে পরিষ্কার করে নিলে সংক্রমণের ঢেউটা আটকানো সম্ভব। ফোটানু বা ড্রপলেট
কোন কাস্টোমার বা কর্মীর নাক-মুখ থেকে অজান্তে পড়ে থাকলে সেটা দূরীভূত করা যাবে।
এজন্যে অযথা হাইপোক্লোরাইড সলিউশান বা হাইড্রোজেন পারোক্সাইড দ্রবণ না ব্যবহার
করাই ভালো। ভবিষ্যতে পরিবেশ দূষণের স্বীকার হয়ে যেতে পারেন যে কেউ।
কি ধরণের
মাস্ক ব্যবহার করা উচিত
কর্মী থেকে
সকল কাস্টোমাররা তিনস্তর বিস্তৃত সার্জিকাল মাস্ক পরলেই কাজ হবে। বেশি দাম দিয়ে এন
নাইটি ফাইভ মাস্ক না পরলেও চলবে।
এই সময়
কি ধরণের খাওয়া দাওয়া করা উচিত
এ সময়ে
সুষম খাবার অর্থাৎ ভাত,ডাল, সবজি,মাছ, ডিম, ফল, দুধ, স্যালাড খেলে দেহে নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জল বেশি করে খাওয়া দরকার।
সেইসঙ্গে নিটোল ঘুম দরকার। তাতেই দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকবে। অযথা আতংকিত,
ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। তাড়াতাড়ি
রোগের কবলে পড়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকগুন বেড়ে যায়।
প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ানোর নামে মুঠো মুঠো ওষুধ খেলে কি সমস্যা হতে পারে
দৈনন্দিন
আমরা যা খাই ভাত, ডাল, শাক-সবজি, মাছ, ফল ও জলই যথেষ্ট। এরজন্যে বেশি প্রোটিন পাউডার, বেশি ভিটামিন ক্যাপসুল, ভিটামিন
সি বড়ি মুঠো মুঠো খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
সারা
পৃথিবীব্যাপীই ভয়াবহ ভাবে বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে, রাজ্যেও হু
হু করে বাড়ছে আতঙ্কের সংখ্যা ফলস্বরূপ মানুষ এখন করোনা আতংকে ভুগছেন, তাই কায়িকশ্রম অনেক
কমে যাওয়ার ফলে অনেকেরই পাচকতন্ত্রে অসুবিধের সম্মুক্ষীণ হচ্ছেন। তারপর ওইসব ওষুধ
মুঠো মুঠো খেলে দেহের পাচকতন্ত্রে চাপ পড়ে অন্যধরণের গোলযোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা
বেশি হবে।
ভয়ে
অনেকেই পালস-অক্সিমিটার /অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়িতে মজুত রাখছে..এটা কি ঠিক
ভয়-ভীতি-আশংকার
নিরীখে অনেকে বাড়িতে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার কিংবা পালস-অক্সিমিটার যন্ত্র কেনার
জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এটার কোন দরকার নেই। কেননা করোনা সংক্রমণের ৮০ শতাংশ
ক্ষেত্রে উপসর্গহীন,
১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃদু
অথবা কিছু বাড়তি উপসর্গ যেমন অল্প জ্বর, গায়ে-হাতে-পায়ে
ব্যথা, নাকে গন্ধ বা মুখে স্বাদ না পাওয়া, বার কয়েক পাতলা দাস্ত এবং তৎসহ বমি ও পেটব্যথা, মাথা
ঘোরা ইত্যাদি উপসর্গে আমরা ঘরে রেখেই চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। আর মাত্র
৫ শতাংশের বেলায় কিছু জটিল উপসর্গ। যেমন-
শ্বাসকষ্ট, হৃৎরোগ বা ব্রেন স্ট্রোকে
আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরাসরি কোভিড হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ
দেওয়া হয়। আর এই রোগে মৃত্যুর হার বেশ কম ২-৩ শতাংশ, যদিও
সংক্রমণের হার ঢের বেশি। সেইসঙ্গে সুস্হতার হার অনেক বেশি। তাই অযথা আতংকে না ভুগে
নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ান, অন্যকে সাহায্য করুণ ভয় কাটাতে,
করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে পাড়া পড়শীদের দ্বারা স্যোসাল
বয়কট ও হেনস্হা, অপমান, নির্যাতনের হাত
থেকে তাঁদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। বোঝান করোনা হলে সব মানুষ মরে যায় না, বেশির ভাগই মানুষ সুস্থ হন। আর বহুজনের সংক্রমণের ফলে সমষ্টির মধ্যে হার্ড
ইমিউনিটি তৈরীতে সাহায্য করবে।
সবার
প্রতি পরামর্শ
বর্তমানে কোভিড সংক্রমণ
ড্রপলেটেরের মাধেমে হাত, মুখ,নাক ও
স্পর্শ বাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞানীর অভিমত এটা বাতাস
বাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেজন্য উপযুক্ত মাস্ক পরতে হবে। যাতে সূক্ষাতিসূক্ষ
কণাকেও ফিল্টার করা যায়। সেইসঙ্গে সামাজিক দূরত্বও মেনে চলতে হবে। যেসব জায়গায়(সে কাজের
জায়গা হোক বা বাড়ী)এসি মেশিন লাগানো আছে সেই এসি মেশিনগুলোতে শক্তিশালী নতুন
ফিল্টার লাগানো দরকার।এরফলে ঘরের মধ্যকার যে বাতাস ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা কম
পরিমাণে ব্যবহৃত হবে। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে সহায়ক হবে।
কুড়ি
সেকেন্ড রোগ মুক্তির পথ
কোভিড
সংক্রমণ এড়ানোর জন্যে হ্যান্ড সেনিটাইজার কিংবা সাবান দিয়ে বারে বারে হাত ধোওয়ার
পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এই হাত ধোওয়ার সঠিক পদ্ধতি হল প্রথমে হাত দুটো জলে ভেজাতে হবে, এরপরে হাতে সাবান
লাগাতে হবে, হাতের তেলোয় ভাল করে সাবান ঘষতে হবে, এক হাতের তেলো দিয়ে অন্য হাতের উপরের দিকে সাবান ঘষতে হবে, এরপরে দুটো হাতের প্রতিটা আঙুলের ফাঁকগুলোয় পরিষ্কার করে সাবান লাগাতে
হবে, এক হাতের আঙুলের পিছন ও নখ অন্য তালুর মাঝখানটায় লাগিয়ে
ভাল করে ঘষতে হবে, সাবানের ফেনা দিয়ে দুটো বুড়ো আঙুলে ঘষতে
হবে,এরপরে একটি আঙুলের ডগা অন্য হাতে ঘষতে হবে শেষে দুটো হাত
ভাল করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে। এই পুরো কাজটা কুড়ি সেকেন্ড ধরে শেষ করলে
সঠিকভাবে হাত সেনিটাইজ করা হবে।
বাইরে
থেকে এলে
বাইরে থেকে
এলে জুতো জোড়া ঘরের বাইরে রেখে হাত সেনিটাইজ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে বাথরুমে গিয়ে
জামা কাপড় ছেড়ে সাবান জলে ডুবিয়ে ভাল করে সাবান মেখে স্নান সেরে পরিষ্কার জামা
কাপড় পরে অন্যান্যদের সঙ্গে মেশা যাবে। সম্ভব হলে শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে চললে
ভাল হয়। এছাড়া বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলার সময়ে বর্তমান পরিস্হিতিতে মাস্ক পরে
থাকলেই ভাল হয়। ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিলে
বিপদের আশংকা কম থাকে। দরকারে দিনের মধ্যে দু-তিনবার স্নান করা যেতে পারে। খুব
প্রয়োজন না হলে এসি মেশিন না চালানোই ভাল। সর্দি-কাশি -জ্বর হলে নিজে চিকিৎসা না
করে চট জলদি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সর্দি-কাশি
-জ্বর হয়েছে শুনলেই অনেক চিকিৎসক, ক্লিনিক, প্রাইভেট হাসপাতাল রোগীকে এড়িয়ে চলে..
প্রাইভেট
ক্লিনিক, হাসপাতাল, পলিক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের
চিকিৎসকদের এবিষয়ে মানবিক হতে হবে, শুধুমাত্র কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে নয়, নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারেও। সন্দেহভাজনদের দ্রুত পরীক্ষা করে
কোভিড পজিটিভ হলে তাদেরকে আইসোলেশন ও চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ করার
প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যার ফলে মানুষের ভয় কমে যাবে আর প্রতিটা নাগরিককে সামাজিক
সুরক্ষাবিধি মন্ত্রে দিক্ষীত করে করোনার
সংক্রমণ চেনটাকে রুখে দেওয়া সেই সঙ্গে জীবনযুদ্ধে বীরদর্পে এগিয়ে যাওয়া। একটাই
মন্ত্র আমরা করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে এসেছি হারতে নয়।
ওসিউর
রহমান,7980155277
No comments:
Post a Comment