করোনা ভাইরাস আতঙ্কে
বিশ্ব
ডাঃ প্রদীপ কুমার দাস
সভাপতি আই এম এ, শ্রীরামপুর শাখা
সভাপতি আই এম এ, শ্রীরামপুর শাখা
চীনের উহান শহরের বাসিন্দারা মরণ ভয়ে থরহরি কম্পমান। করোনা ভাইরাসের থাবায় এ পর্যন্ত সতেরশোর কাছাকাছি লোক আক্রান্ত করোনা ভাইরাসে। মারা গেছে আশির কাছাকাছি। উহান শহরের লোকেরা এখন বন্দি জীবন কাটাতে ব্যস্ত। কোন বাইরের লোককে উহান শহরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না বা উহান শহর থেকে কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। প্রতিটি লোককে এখন কড়া নজরদাড়ির মধ্যে রাখা হয়েছে। বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর, রেল স্টেশন, বাস স্টপেজে চলছে কড়া স্বাস্হ্য পরীক্ষার নজরদারি। যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদেরকে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে কড়া পাহারায় পরীক্ষ-নিরীক্ষা চলছে। চীন ছাড়াও এখন পর্যন্ত তাইওয়ান,ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হদিশ পাওয়া গেছে। আতঙ্কে
রয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশও। কিভাবে রেহাই পাওয়া যাবে এই ভাইরাসের আক্রমণের হাত
থেকে জানাচ্ছেন- ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন শ্রীরামপুর শাখার সভাপতি ডাঃ
প্রদীপ কুমার দাস
# করোনা ভাইরাস কি
করোনা হল
কমন রেসপিরেটারি ভাইরাস ইনফেকশন। করোনা ভাইরাসের নামকরণের কারণ হল এই ভাইরাস একইসঙ্গে নাক, সাইনাস কিংবা গলার উপরিভাগে সংক্রমণ ঘটায় বলে।ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি।
করোনা ভাইরাস এর নামকরণ করা হয়েছে ল্যাটিন শব্দ করোনা যার অর্থ হল মুকূট বা আলোর ছটা। করোনা ভাইরাসের গড়নটা ওইরকম মুকুট বা আলোর ছটার মতন দেখতে বলে ওই নামকরণ। চারটে প্রজাতি -আলফা, বিটা, ডেলটা ও গামা। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আক্রমণ করে।
# কিভাবে এটা ছড়িয়ে পড়ে
রোগের বাহক- সামুদ্রিক মাছ, সাপ, বিড়াল,বাদুড়, উঠের দেহ থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস ছড়ায়। আক্রান্ত মানুষের থেকেও ছড়াতে পারে।সাম্প্রতিককালে জানা গেছে নোভেল করোনাভাইরাস একটা নতুন প্রজাতির যেটা এই ভাইরাসের জন্মসূত্রে ছিল না। নোভেল করোনাভাইরাস তাই বিপ্পজনক মানুষের ক্ষেত্রে।
এই ভাইরাসের উৎস খুঁজতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হার অভিমত হল এর উৎপত্তি কোন প্রাণী থেকে। তাঁরা এর স্বপক্ষ যুক্তি
দেন উহান শহরের একটি মাছের পাইকারি থেকে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়েছে।
সম্ভবত সামুদ্রিক মাছের থেকে সংক্রমণটা ছড়িয়ে পড়েছিল।
মানুষ ও মুরগীর ক্ষেত্রে শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটিয়ে ফেরিনজাইটিস, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, সাইনোসাইটিস রোগের সৃষ্টি করতে পারে। গরু ও শূয়রের ক্ষেত্রে মারাত্মক উদারময় বা ডায়রিয়া ঘটাতে পারে। সতর্ক না হলে কোন কোন পশুশালায় মহামারী ঘটিয়ে দিতে সক্ষম এই করোনা ভাইরাস।
# শূকর থেকে কি রোগ ছড়ায়?
শূকর বাহক হিসেবে কাজ করে এই ভাইরাসের।
# কেন এই ভাইরাস এত বিপজ্জনক
এখনো পর্যন্ত এই রোগ নিরাময়ের কোন ওষুধ নেই বা নেই কোন প্রতিষেধক। করোনা ভাইরাস হল এক পরিবারের অনেকগুলো ভাইরাস। সম্প্রতি চিনে যে করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে সেটির নাম হল নোভেল করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রমণে রোগীর শ্বাসযন্ত্র ও কিডনি বেশি খারাপ হওয়ার আশংকা থাকে। তাই রেসপিরেটরি ফেলিওর কিংবা কিডনি ফেলিওর হয়ে রোগী মারা যেতে পারে।
# লক্ষণগুলো কি কি
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধুমজ্বর
সর্দি-কাশি,
গলায় ব্যথা,
শ্বাসকষ্ট,
নাক দায়ে জল ঝরা,
খুসখুসে
কাশি ও গলায় কিছু আটকে আছে এমন অস্বস্তি।
# সার্স ভাইরাসের সঙ্গে এর কি কোনও মিল রয়েছে?
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে যে যে শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয় (ধুম জ্বর, কষ্টকর কাশি ও নিশ্বাসের কষ্ট) ঠিক প্রায় একই
লক্ষণ দেখা যায়
সার্স ভাইরাস সংক্রমণে ফলে। সার্স ভাইরাস হল সিভিয়ার এ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম। দু হাজার সালে চীনে প্রায় দু হাজার জনকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত
হয়েছিল এই সার্স ভাইরাসের সংক্রমণে। এমনকি বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল
এই সার্স ভাইরাস। শুধু চীনদেশ নয় এর থাবা ছড়িয়ে পড়েছিল এশিয়ার অনেক দেশে যার দরুণ প্রায় আটশোর জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।
করোনা ভাইরাস
এর সঙ্গে লক্ষণগত মিল রয়েছে সার্স ভাইরাসের । কিন্তু গঠনগত নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ভাইরাসের জেনেটিক কোড অনুধাবন করে জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের গঠনটা অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতন। তবে সার্স ভাইরাসের মত ব্যাপক ক্ষতিকারক নয়। সার্স ভাইরাস যেমন মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে খুব স্বল্প সময়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে তেমনি খুব দ্রুত না হলেও মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে করোনা ভাইরাসের এমনটাই অভিমত চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের।
# আক্রান্ত হওয়া
ঠেকানো যাবে কিভাবে?
বর্তমানে
এই ভাইরাস সংক্রমণে চীন দেশের প্রায় সতেরশো মানূষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন আশির কাছাকাছি মানুষজন। উহান শহরের লোকেরা এখন বন্দি জীবন কাটাতে ব্যস্ত। কোন বাইরের লোককে উহান শহরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না বা উহান শহর থেকে কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। প্রতিটি লোককে এখন কড়া নজরদাড়ির মধ্যে রাখা হয়েছে। বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর, রেল স্টেশন, বাস স্টপেজে চলছে কড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার নজরদারি। যাঁরা অসুস্হ হয়ে পড়ছেন তাদেরকে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে কড়া পাহারায় পরীক্ষ-নিরীক্ষা চলছে। চীন ছাড়াও এখন পর্যন্ত তাইওয়ান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হদিশ পাওয়া গেছে। এমন কি আমেরিকায়ও এই ভাইরাসের সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি
জনৈক ভদ্রমহিলাকে সন্দেহের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ভারতবর্ষে।
চীনা কতৃপক্ষের সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ হল নব বৎসরের আগমন। সেই উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হবেন ও বহু পর্যটক তাঁদের দেশের মাটিতে পা রাখবেন তাই মানুষে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ করার লক্ষে চীনা স্বাস্থ্য দপ্তর কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। সংক্রামিত ব্যক্তিকে কোয়ারেনটাইন বা নির্দিষ্ট সময় ধরে আলাদা করে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্হা করা যতক্ষণ না ঝুঁকির সময় পার হচ্ছেন, উহান প্রদেশের মাছের বাজার বন্ধ করে দেওয়া, ফ্রিজজাত ঠান্ডা মাংস, ডিম, দুধের রান্নার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা, ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।এছাড়া নিয়মিত নজরদারি চলছে বড় বড় বিমানবন্দরের যাত্রীদের উপর।
সম্প্রতি
আমেরিকায়
পাঁচজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলায় ব্যথা, গ্ল্যান্ড ফোলায় ভুগছেন। যাতে এই রোগটা না বেশি ছড়িয়ে পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন আমেরিকার স্বাস্থ্য দপ্তর। এই রোগের এখনো পর্যন্ত নিরাময়ের কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক চিকিৎসকদের হাতে নেই বলে তাঁরা খুবই চিন্তিত। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা সারা
বিশ্ববাসীকে
এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলে আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে এখুনি এতটা উদ্বেগের কোন কারণ নেই।
# এদেশে কি করোনা ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে
ভারতবর্ষে
এখনো পর্যন্ত এই ভাইরাস সংক্রমণের কোন খবর নেই। তবে যেহেতু এই ভাইরাস দেহের মধ্যে ঢুকলে চোদ্দ দিন লাগে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে তাই আক্রান্ত এলাকা থেকে সেটি চিন, জাপান, থাইল্যান্ড যে কোন দেশই হোক, দেশি বা বিদেশী যাত্রীকে চোদ্দ দিন কড়া নজরবন্দির মধ্যে রাখা দরকার। এ ব্যাপারে কোন অজুহাত বা সুপারিশে কান না দেওয়াই উচিৎ। আর সহযাত্রীদের এই রোগ ঠেকাতে দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করাই উচিত। তবে এখনো পর্যন্ত এ দেশের সব কটি স্বাস্থ্য দপ্তর এই ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিহবহল। তাই অযথা আতংকের কোন কারণ নেই এই নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে।
# বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আপনার পরামর্শ
প্রতিরোধঃ
।সর্দি-কাশি, জ্বর, গলায় ব্যথা, খুসখুসে কাশি ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিৎ
প্রয়োজন হাঁচি, কাশির সময় নাক, মুখ ঢেকে রাখা আক্রান্ত রোগীকে দেখভাল করার সময় পরিসেবাপ্রদানকারীদের নাক-মুখে মাস্ক পরাটা খুবই জরুরী
রোগটা যেহেতু ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত রোগীর থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাটা দরকার। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্মী সহ নার্স ও চিকিৎসকদের অবশ্যই সচেতন ও সতর্ক হতে হবে
হাত সব সময় সাবান জলে পরিষ্কার করা দরকার
অপরিষ্কার
হাত দিয়ে চোখ, মুখ, নাক, কান ছোঁয়া চলবে না।
সাক্ষাৎকারঃ ওসিউর রহমান
No comments:
Post a Comment