ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়
ডাঃ মহম্মদ সামসুজ্জামান
অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ
কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ
কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
ডেঙ্গু কি
ডেঙ্গু জ্বর বা ব্রেকবোন ফিভার (breakbone fever) নামেও
পরিচিত। একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রামক রোগ। যে কোনো সংক্রামক রোগ মূলতঃ তিনটি
জিনিসের আন্তঃ সম্পর্কের ফলে তৈরি হয় । ১. এজেন্ট অর্থাৎ যে রোগজীবানু (এক্ষেত্রে
ডেঙ্গু ভাইরাস) ২. হোস্ট বা যাদের মধ্যে রোগটি হবে ও ৩.পরিবেশ।
ডেঙ্গু ভাইরাস-এটি একটি RNA ভাইরাস এবং এর চারটি ভাগ
আছে- DENV-1, DENV-2 DENV-3, এবং DENV-4 এই চারটি সেরোটাইপ মিলে রোগর পূর্ণচিত্র তৈরি করে। যদি কেউ আগে DENV-১ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং পরে DENV-২ বা DENV-৩ দ্বারা আক্রান্ত হন কিংবা প্রথমে যদি কেউ DENV-৩ আক্রান্ত হয়ে পরে DENV-২ তে আক্রান্ত হন, সে সব ক্ষেত্রে প্রবল জটিলতা দেখা দেয়।
আছে- DENV-1, DENV-2 DENV-3, এবং DENV-4 এই চারটি সেরোটাইপ মিলে রোগর পূর্ণচিত্র তৈরি করে। যদি কেউ আগে DENV-১ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং পরে DENV-২ বা DENV-৩ দ্বারা আক্রান্ত হন কিংবা প্রথমে যদি কেউ DENV-৩ আক্রান্ত হয়ে পরে DENV-২ তে আক্রান্ত হন, সে সব ক্ষেত্রে প্রবল জটিলতা দেখা দেয়।
এটা কেন হয় কিভাবে হয় কিভাবে
এটা ছড়ায়
ডেঙ্গু ভাইরাস প্রাথমিকভাবে এডিস মশা দ্বারা পরিবাহিত হয়, বিশেষ করে এজিস ইজিপ্টাই ভাইরাসের প্রাথমিক ধারক মানুষ। এডিস
মশার গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে বলে একে বাঘ মশক ও বলা হয়।
স্ত্রী মশা ডেঙ্গু আক্রান্তের রক্তপান করে সংক্রমিত হয় এবং প্রায় ৮-১০দিন পর ভাইরাস মশার লালাগ্রন্থিতে আসে। এই সংক্রমিত
মশা যখন সুস্থ মানুষকে কামড়ায়, মোটামুটি ভাবে ২-৭দিন পরে প্রথম উপসর্গ দেখা দেয। এডিস
মশা সাধারণত কৃত্রিম জলাধারে ডিম পাড়ে। বাড়ির
চারপাশের যেকোনো জমা জলে যেমন-ডাবের খোলা, প্লাস্টিকের বোতল, টায়ারের ভিতরে জমে থাকা জল,
নিন্মীয়মান বাড়ির আশে পাশে জমে থাকা জলে, ফুলের
টব, ফুলদানি, কুলার, এসি, ফ্রিজের জমা জল- ইত্যাদি জায়গায়
ডিম পাড়ে। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়।
এরোগ কাদের বেশি হওয়ার
সম্ভাবনা
যে কোনো বয়সের ব্যক্তিই আক্রান্ত হতে পারেন। শিশু, ছোট
বাচ্চা, খুব বয়স্ক যাদের ইমিউনিটি কম, যেমন- ডায়য়াবেটিস, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী এদের ক্ষেত্রে রোগের প্রাবলন্য বেশি দেখা যায়।
বাচ্চা, খুব বয়স্ক যাদের ইমিউনিটি কম, যেমন- ডায়য়াবেটিস, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী এদের ক্ষেত্রে রোগের প্রাবলন্য বেশি দেখা যায়।
কোন সময় এরোগের প্রকোপ বেশি
হয়
উপযুক্ত আবহাওয়া ও পরিবেশ ডেঙ্গুর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণতঃ
জুন থেকে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, অর্থাৎ বর্ষাকালে
ভিজে স্যাংত স্যাতে আবহাওয়া ডেঙ্গুর জন্য খুব উপযুক্ত। এই সময়েই
বেশির ভাগ ডেঙ্গুর শিকার হন।
এই রোগের লক্ষণ
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কতকগুলি ভাবে বিভক্ত করা যায়।
প্রথমতঃ সাধারণ ডেঙ্গু দ্বর।প্রচন্ড জ্বর , মাথাব্যাথা, সমস্ত গায়ে হাতে পায়ে প্রচন্ড যন্ত্রণা,
বমি, পেটে ব্যথা, এবং ছোট
ছোট লাল পিঁপড়ের মত রাস – এগুলোই প্রধান লক্ষণ।
রক্তে অণুচক্রিকার পরিমান হ্রাস পেতে থাকে। দ্বিতীয়
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর- যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। নাক
থেকে রক্ত, বমির সাথে রক্ত, অতিরিক্ত মাসের রক্ত,
কালো পায়খান হওয়া কিংবা মূত্র এবং পায়খানা থেকে রক্ত বের হতে পারে। উপযুক্ত
সময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পরিণত হতে পারে।
এক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়াএবং রক্তচাপ
অত্যন্ত কমে যেতে পারে। ঠিকমত সময়ে
চিকিৎসা শুরু
না হলে বিভিন্ন সিস্টেম যেমন- মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি, হার্টি, ফুসফুস- সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
না হলে বিভিন্ন সিস্টেম যেমন- মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি, হার্টি, ফুসফুস- সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
এই লক্ষণগুলি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ খাওয়া উচিত। দোকান থেকে
অ্যান্টিবায়েটিক কিনেখাওয়া একদমই উচিত নয়, কারণ এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ডেঙ্গু ছোঁয়াচে কিনা
ডেঙ্গু রোগীর সঙ্গে ওঠাবসা করলে কখনোই ডেঙ্গু হবে না অর্থাৎ ডেঙ্গু মোটেই
ছোঁয়াচে নয়। যদি না ওই সংক্রামিত মশা
(যা ডেঙ্গুর বাহক) কামড়ায়।
চিকিৎসা
*সাধারণত বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করানো যেতে পারে।
*এক্ষেত্রে বেশী করে তরল খাদ্যবস্তু এবং ডিহাইড্রেশন এড়ানোর জন্য ও আর এস এর
জল বেশী করে খাওয়ানো উচিত। (অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে)।
*প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কেন ওষুধ সাধারণত প্রয়োজন হয় না। যদি কোন রক্তক্ষরণ
হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
*বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেবেন না, এবং বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে যে যে জায়গায় জল
জমতে পারে সেগুলো শুকনো এবং পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করুণ।
*লম্বা হাতওয়ালা জামা পরার চেষ্টা করুন (বিশেষত আশেপাশে কারুর ডেঙ্গু হয়ে
থাকলে)
*জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে রক্ত
পরীক্ষা করান।
*ডেঙ্গু
কখনো কখনো একটি ভয়ঙ্কর মহামারী রোগ হিসাবে দেখা দিতে পারে। এবিষয়ে বিশেষভাবে
সচেতন হোন। তাই আসুন সবাই মিলে এর প্রতিরোধে সচেষ্ট হই। সুস্থ থাকুন, ভালো
থাকুন।
No comments:
Post a Comment