এনসেফেলাইটিসে ভয় নয়,
চাই সতর্কতা
ডাঃ প্রদীপ কুমার দাস
সভাপতি আই এম এ, শ্রীরামপুর শাখা
সহ সভাপতি আই এম এ বঙ্গীয় রাজ্য শাখা
সম্প্রতি বিহারে
এনসেফেলাইটিস এ আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বহু শিশু। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত
মৃত্যুর কারণ এনসেফেলাইটিস।
এনসেফেলাইটিস কি
এনসেফেলাইটিস
হল মস্তিষ্ক কোষের প্রদাহ। যেটার সূত্রপাত জীবাণু, ভাইরাস কিংবা পরজীবীর সংক্রমণজাত
থেকে। জীবাণুর
মধ্যে মেনিনকোক্কাস, ই কোলাই, নিউমোকক্কাস, ক্লেবসিয়েলা, স্ট্রেপটোকক্কাস,
স্টাইফাইলোকক্কাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভাইরাসের মধ্যে জে ই, নিপা, চন্ডিপুরা খুবই সক্রিয়।
পরজীবীর মধ্যে টক্সোপ্লাজমা কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
এনসেফেলাইটিস কেন হয়
জে ই
ভাইরাস বা জাপানীজ এনসেফেলাইটিস ভাইরাস কিউলেক্স মশার দ্বারা বাহিত হয় এক মানুষ
থেকে আর এক মানুষের মধ্যে। এটি ফ্লাবি ভাইরাস। এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে সারা এশিয়া
মহাদেশে বছরে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি আক্রান্ত হয়। এছাড়া নিপা ও চন্ডিপুরা
ভাইরাসের জন্যে এনসেফেলাইটিস এর প্রার্দুভাব দেখা যায় মালেয়েশিয়া ও ভারতে।
ভিয়েতনামে নন জে ই এর সংক্রমণের জন্যে এনসেফেলাইটিস দেখা যায়।
কোন সময় এবং কাদের বেশি
হয়
মে মাস
থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এটা হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ১ থেকে ১৫ বছর বয়স্কদের
ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।
এতে কি শিশুদের আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি কেন
এতে শিশুরা
বেশি করে আক্রান্ত হয় কেননা ওই সময়ে ওদের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
এর লক্ষণ কি কি
ধূম জ্বর
(৮৯%)
খিচুনী (৮২%),
বমি (৬৪%),
ভুল বকা বা
প্রলাপ বকা (৮৫%),
জ্ঞান
হারানো (১০%),
ঘাড় শক্ত
হয়ে যাওয়া (৬৭%)।
এছাড়া হাত
পা পড়ে যাওয়া ১৩ শতাংশ ঘটতে দেখা যায়।
এর চিকিৎসা
হাসপাতালে
ভর্তি করে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা শুরু করা উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ফ্লুইড ও
ইলেকট্রোলাইটস এর যোগান সুনিশ্চিত করা, জ্বর কমানো, খিঁচুনী হলে তার চিকিৎসা
করা ইত্যাদি।
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়
বিহারেই এটা হওয়ার প্রবণতা বেশী কেন
বিহারে
বেশি হওয়ার কারণ হল অপ্রতুল চিকিৎসার ব্যবস্থা, অতিরিক্ত জনঘনত্ব, চিকিৎসা
পরিকাঠামোর অব্যবস্থা, সচেতনতার অভাব, শিশুদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার
ক্ষেত্রে মায়েদের কিছুটা উদাসীন মনোভাব।
এরাজ্যে এনসেফেলাইটিস
হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি
এ রাজ্যেও
ওই ধরণের সংক্রমণ ঘটনার সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে। কেননা এখানেও জনঘনত্ব বেশি এমন বহু
এলাকা আছে। তবে চিকিৎসা পরিকাঠামো এখন অনেক উন্নত মানের করা হয়েছে। সেই সঙ্গে
সচেতনতা বেড়েছে সর্বস্তরে। তবুও আমাদের চোখ কান খুলে রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের
অনেকে লিচু কে কারণ হিসাবে দেখাচ্ছেন- এবিষয়ে আপনার মতামত।
লিচুর
সঙ্গে এনসেফেলাইটিস এর সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে চিকিৎসকদের মনে। অনুমান
করা হয় লিচু গাছে ফল খেকো বাদুড়ের আর্বির্ভাব হয়। এনসেফেলাইটিস ভাইরাস এর বাহক হিসেবে কাজ করে ফল
খেকো বাদুড়। এদের
দেহেতে ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত ঘটে। কিউলেক্স মশা বাদুড়কে কামড়ানোর ফলে ভাইরাসটা
বাদুড় থেকে মশায় চলে আসে। মানুষকে কামড়ালে মানুষের দেহের মধ্যে চলে যায় ও পরে
এনসেফেলাইটিস রোগ সৃষ্টি হয়।
এছাড়া
বাদুড়ের কামড়ানো লিচুর মধ্যে সংক্রামিত বাদুড়ের লালা রস ও প্রস্বাব ও মলের
সংমিশ্রণ ঘটলে ভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে মানুষের মধ্যে।
কাঁচা
লিচুর মধ্যে হাইপোগ্লাইসিন প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিন দেহের মধ্যে গ্লুকোজ তৈরি
হতে বাধার সৃষ্টি করে। তাই কাঁচা লিচু খেলে শিশুদের রক্তে চিনি কমে গিয়ে খিচুনি
হতে পারে।
এনসেফেলাইটিস থেকে রেহাই
পাওয়ার জন্য কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন- বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আপনার
পরামর্শ।
বাড়ির আশপাশ
ও পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
রাতে মশারি
টাঙিয়ে শুতে হবে।
বাড়িতে কোথাও
যাতে জমা জল না থাকে সেদিকে কড়া নজর দিতে হবে।
রোগ হলে
চটপট ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিশুদের
১-১৫ বছরের মধ্যে জে ই টিকা দিয়ে দিতে হবে।
No comments:
Post a Comment