সোয়াইন ফ্লু থেকে রেহাই পাবার উপায়
ডাঃ প্রদীপ কুমার দাস
সভাপতি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল
অ্যাসোসিয়েশন, শ্রীরামপুর শাখা
সোয়াইন ফ্লু কি
সোয়াইন ফ্লু হল এক ধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগের
লক্ষণসমূহের প্রকাশ। যেহেতু শুকরের দেহে এটা প্রথমে হয় তাই এর নাম সোয়াইন ফ্লু। ২০০৬
সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মানুষের মৃত্যুর
কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নতুন ভাইরাসের নামকরণ করা হয় এইচ ওয়ান এন ওয়ান (H1N1)
টাইপ এ। এটি সম্ভবত মানুষ, শূকর এবং পাখির ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংমিশ্রণের তৈরি। ২০০৯ এর
জুন মাসে বিশ্বের ৭৪টি দেশে এই ভাইরাস
সংক্রমণের জন্য বিশ্বব্যাপী মহামারী ভাইরাস হিসাবে এটি চিহ্নিত হয়ে আছে।
কীভাবে সোয়াইন ফ্লু ছড়ায়
এটা শুকরের মাধ্যমে মানুষের দেহে ঢুকে পড়তে পারে। এর সঙ্গে আক্রান্ত মানুষের
হাঁচি, কাশি প্রভৃতির মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।
শুধু তাই নয়, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য বস্তু যেমন, রুমাল, বিছানার চাদর,
বালিশের কভার, দরজার হাতল ইত্যাদির মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। সাধারণত রোগের
লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১ দিন আগে থেকে আক্রান্ত হওয়ার ৭ দিন বা তারও বেশি দিন পর্যন্ত অন্যদের
দেহে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে খাবার বা রক্তের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় না।
কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির
সম্মুখীন
যে সব মানুষের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম।
শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে সোয়াইন ফ্লু বিপদজ্জনক। এছাড়া হাঁপানী রোগী, হৃদরোগী
ও এইডস আক্রান্ত রোগীদের এই ভাইরাস আক্রমণ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা বিশেষভাবে
প্রয়োজনীয়।
সম্প্রতি রাজ্য এবং দেশের
বিভিন্ন জায়গায় সোয়াইন ফ্লু তে আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে – কেন এরকম হচ্ছে
বলে আপনি মনে করেন
ম্যান টু ম্যান কনট্যাক্ট এর মাধ্যমে এই ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে। এরাজ্য বা
দেশের যেসব এলাকায় পশু চিকিৎসালয় রয়েছে, শুয়োরের খোঁয়াড় রয়েছে, শহরতলী বা বস্তির
অস্বাস্থ্যকর জায়গাগুলি থেকে এই ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে। তাই এইসব জায়গায় বিশেষভাবে
নজরদারীর মধ্যে রাখা দরকার।
চরিত্র বদলে- বিশেষজ্ঞদের
মতামত প্রকোপ বাড়বে সোয়াইন ফ্লু-র- এবিষয়ে আপনার মন্তব্য
যে কোন ভাইরাস বা জীবানু কিংবা ফ্যাঙ্গাস ও পরজীবীদের চরিত্রগত পরিবর্তন এখন
চিকিৎসাকদের কাছে বড় মাথা ব্যথার কারণ। কেননা যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস শুয়রের মধ্যে
দিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে, আবার অন্য
প্রজাতির পাখির মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে
সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যে এখন এদের সংমিশ্রণ হচ্ছে। তখনই এদের চারিত্রিক বদল ঘটে
যাচ্ছে অভাবনীয়ভাবে। ফলে নতুন নতুন প্রজাতি তৈরি হচ্ছে যাদের মারণক্ষমতা বা
ক্ষতিকর ক্ষমতা অনেকগুণ বেশি হয়ে দেখা যাচ্ছে। সেদিক থেকে আগামী দিনে ভাইরাস এর এই
চরিত্রবদল চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করাচ্ছে।
এটা কি ভয়াবহ বা আতঙ্কিত হবার মত
সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
এখানে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই। তবে যেসব অঞ্চলে শুয়োরের
খোঁয়াড় রয়েছে, শহরতলী বা বস্তির অস্বাস্থ্যকর-নোংরা জায়গাগুলির প্রতি বিশেষ
নজরদারী দেওয়া প্রয়োজন।
সাধারণ ফ্লুয়ের সঙ্গে এর ফারাক
কোথায়
সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সোয়াইন ফ্লু এর লক্ষণসমূহ প্রায় একই রকম। কিন্তু সোয়াইন
ফ্লু মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু
সাধারণ ক্ষেত্রে সেটা হয় না। সোয়াইন ফ্লু তে জটিলতা ও মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি সাধারণ
ফ্লু-র তুলনায়।
কোন ব্যক্তি সোয়াইন ফ্লু তে
আক্রান্ত তা বোঝার উপায় কি
সাধারণ ভাবে বোঝার সেরকম কোন উপায় নেই। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ
হলে যেমন জ্বর, মাথা ব্যথা গায়ে ব্যথা, গলায় ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্ষূধামন্দ,
দুর্বলতা ও অলসতা বেশি থাকে, ওজন কমে যায়- তেমনই সোয়াইন ফ্লু তে ও একই রকম উপসর্গ
থাকে।
কাদের জন্য এটা খুবই বিপদজ্জনক
হাঁপানী, হৃদরোগী, এইডস রোগী, শিশু, বয়স্কদের, গর্ভবতী মা, ডায়াবেটিক রোগী,
কিডনির অসুখে ভুগছেন এমন রোগী, ক্যান্সার রোগী বিশেষ করে কেমোথেরাপী হচ্ছে এরকম
রোগীদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক এই ভাইরাস সংক্রমণ।
পরীক্ষা
নিরীক্ষা
গলার লালা পরীক্ষা করা ও
রক্তের RT PCR পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কতদিন লাগে
সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময়
লাগে ২-৩ সপ্তাহ।
সোয়াইন ফ্লু যাতে না হয় তার
জন্য কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা দরকার
যেহেতু এটি ভাইরাসঘটিত, তাই চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। টিকা নেওয়া যেতে
পারে।
চিকিৎসা
জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল।
আক্রান্ত এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করা,
রুমাল ব্যবহার না করে টিসু ব্যবহার করা
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে করণীয়
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অবশ্যই টিকাকরণ করে নেওয়া
বারে বারে হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
লিকুইড সাবান ব্যবহার করাই ভাল।
অ্যালকোহল বাইজ সেনিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছোট্ট শিশুদের কোলে নেওয়ার আগে হাত জীবানুমুক্ত করে নেওয়া
হাঁচি, কাশি আক্রান্তদের থেকে দূরে থাকা
এবং প্রয়োজনে মাক্স ব্যবহার করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন