মস্তিষ্কের টিউমার
ডাঃ কৌশিক শীল,
কনসালট্যান্ট
ব্রেন অ্যান্ড স্পাইন স্পেশালিস্ট
আসলে কি
কেন হয় এবং কাদের বেশি হয়
এটা সঠিক কেন হয় তা জানা যায় নি। কিন্তু
কিছু জিন থাকা বা না থাকার ফলে এই ধরণের টিউমার হয়। এর সঙ্গে কিছু environmental
influence যেমন রেডিয়েশন কাজ করে। তবে কাদের এই ধরণের টিউমার হবে তা
আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়।
ছেলে বা মেয়ে কাদের বেশি হয়
ছেলে ও মেয়েদের যে কারও হতে পারে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে ছেলেদের হার বেশী।
পৃথিবীতে/ ভারতবর্ষে/
পশ্চিমবঙ্গে এর প্রাদুর্ভাব কেমন
পৃথিবীতে প্রতি ১ লাখ লোকের মধ্য ৫ জন ব্রেন টিউমার এ আক্রান্ত হন। ভারতে এবং
দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে এর হার কিছু কম আবার উত্তর ইউরোপ এবং কানাডাতে এর হার কিছু
বেশী। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৩০,০০০ লোক ব্রেন টিউমার এ আক্রান্ত হন। পশ্চিমবঙ্গে
ক্যান্সার পেশেন্ট দের প্রায় ১০-১৩% ব্রেন ক্যান্সার এ
আাক্রান্ত।
কি করে বুঝব যে মস্তিষ্কে
টিউমারে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে
মস্তিষ্কের টিউমার এর প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে মাথা ব্যথা। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে
গা গোলানো ভাব হয়। বমি হয়ে গেলে অনেক সময়ে এই মাথাব্যথা কমে যায়।
পরের দিকে চোখে ঝাপসা দেখা যায় এবং হাত পায়ের পক্ষাঘাত আসতে পারে। অনেক সময়ে
রোগীর খিচুনিও হয়।
আপনারা কখন নিশ্চিত হন যে
মানুষটি মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়েছে তখন প্রথমেই কি ব্যবস্থাপনা নেন
উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে ডাক্তারবাবুরা প্রথমে সিটি স্ক্যান করতে দেন।
এটাতে সন্দেহজনক কিছু পেলে তখন পেশেন্টকে এম আর আই(MRI) করানো
হয়। MRI করতে গেলে টিউমার ভালো করে দেখার জন্যে অনেক সময় contrast
injection দিতে হয়।
চিকিৎসা কি
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে ব্রেন টিউমার পেশেন্টকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে steroid জাতীয় injection দেওয়া হয়। এর সাথে খিঁচুনি না হতে
দেওয়ার কিছু ওষুধও দেওয়া হয়। তারপরেই রোগীর অপারেশন করা হয়।
অপারেশন কি খুবই জটিল
ব্রেন টিউমার এর অপারেশন খুব জটিল না
হলেও এটা খুবই সুক্ষ্ম কাজ। কারণ নরম্যাল ব্রেনকে বাচিয়ে টিউমার হওয়া ব্রেনকে বার
করতে হয়। একটু এদিক ওদিক হলে নরম্যাল ব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং পেশেন্ট এর
পক্ষাঘাত হয়।
অপারেশনে কি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্রেন টিউমার অপারেশন করার পর আরও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
যদি অপারেশন পরবর্তী বায়োপসি তে ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে radiotherapy
অথবা chemotherapy করা প্রয়োজন – না হলে
টিউমার আবার অচিরে ফিরে আসবে।
অপারেশনের পর কি কি
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হয়
ব্রেন টিউমার অপারেশন এর পর প্রায় একমাস রেস্ট নিতে হয়।
এছাড়া যদি অপারেশন এর আগে বা পরে পক্ষাঘাত হয় তাহলে physiotherapy
র দরকার হয়। প্রায় এক বছর অবধি খিচুনির ওষুধ চলতে থাকে।
অপারেশন এর পর কতদিন সম্পূর্ণ
সুস্থ হতে সময় লাগে
সম্পূর্ণ সুস্থ হতে প্রায় মাস তিনেক লেগে যায়।
এই অপারেশন কি খরচ সাপেক্ষ
ব্রেন টিউমার এর অপারেশন মোটামুটি খরচ সাপেক্ষ।
মস্তিষ্কে টিউমার হয়েছে –একথা
শোনার পর রোগী যথেষ্ট ভেঙে পড়ে এবং তার মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে কীভাবে
আপনারা আস্বস্ত করেন
ব্রেন টিউমার আক্রান্ত রুগীদের প্রথমেই মানসিক জোর আনতে হবে। তাঁকে বোঝাতে
হবে যে সব ব্রেন টিউমার ক্যান্সার নয়। ফলে ওনার জীবনহানির আশংকা অমূলক। এছাড়াও
রুগীকে বুঝতে হবে যে অপারেশন ছাড়া কোন রাস্তা নেই এবং অপারেশন এ বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞ হিসাবে এবিষয়ে আপনার
পরামর্শ
আমরা হামেশাই দেখি যে ব্রেন টিউমার ধরা পড়লে অপারেশন করাতে পেশেন্ট বা তাঁর বাড়ীর
লোকেরা ইতস্তত করেন। আরও অনেক ডাক্তারের পরামর্শ , টোটকা চিকিৎসা শুরু করেন। এর
ফলে টিউমার ভিতরে বাড়তেই থাকে এবং যখন রোগীকে আমাদের কাছে নিয়ে আসা হয় তখন টিউমার
এর সাইজ এত বেড়ে যায় যে দেখা যায় যে তখন অপারেশন করাটা খুব বিপজ্জনক হয়ে যায়। তাই
আমার পরামর্শ যে ব্রেন টিউমার এর কোন রুগী থাকলে রোগ ধরা পড়া মাত্রই কোনও বিশেষজ্ঞ
ব্রেন সার্জেনকে দিয়ে দেখিয়ে স্বত্তর অপারেশন করিয়ে নেবেন। অপারেশন এর পরে
বায়োপসি রিপোর্টাই বলে দেবে যে টিউমার ভালো না খারাপ, রুগী সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন
কিনা। প্রাথমিকস্তরে তাড়াতাড়ি অপারেশন করলে অধিকাংশ ব্রেন টিউমার কন্ট্রোল করা
সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন