শীতকালীন রোগের হাত থেকে বাঁচার উপায়
ডাঃ প্রদীপ কুমার দাস
সভাপতি, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, শ্রীরামপুর
শাখা
শীতকালে
শুধু সর্দিকাশি নয়, হাঁপানি, ভাইরাল জ্বর ও যাদের বাতের ব্যথা আছে সেই অসুখগুলোও
বেড়ে যায়। ঠান্ডা লেগে গলার টনসিল ফোলে ও সংক্রমণ হয়। আবার কিছু চামড়ার রোগও
দেখা দেয় এসময়ে। বাচ্চা বয়স্ক সবাই ভুগতে থাকে।
শীতের
শুরুতে বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতার পরিবর্তন হয়। বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা শুষ্ক হয়ে যায়। বাতাসে ধুলোবালি
বেশি উড়ে। তাই শীতকালে এ ধরণের রোগ বেশি হয়। আর ঠান্ডা বাড়লেই গলায় ব্যথা, নাক
দিয়ে জল পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এর সঙ্গে ধুম জ্বর ও সঙ্গে হাতে পায়ে গায়ে বেশ ব্যথা হয়।
শীতকালে
এটা বেশি হওয়ার কারণ ঠান্ডায় পেশীকলার সংকোচন বেশি হয়। এর জন্যে পেশী কলায়
নড়াচড়ায় খিচ ধরে ও ব্যথা বোধ বেশি হয়।
যারা বয়স্ক
(৬০-৭০) বছর তাদের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা ও সহন ক্ষমতা কম বলে এরাই বেশি
বেশি করে আক্রান্ত হন। একই কারণে ছোট ছোট শিশুরাও আক্রান্ত হয়।
শীতকালে
গ্রামের লোকেদের দুঃখ দুর্দশা অনেক বেশি হত শহরের তুলনায়। কিন্তু বর্তমানে শহর
গ্রামে দুই জায়াগার লোকেরা সমানভাবে ভুক্তভোগী কারণ শহরে দূষণের মাত্রাও অনেক
বেশি গ্রামের তুলনায়। শহরে দূষণের মাত্রাটা বেশি ফলে শীতের অনুভূতিটাও কম।
অন্যদিকে গ্রামে দূষণের মাত্রাটা কম ফলে শীতের অনুভূতিটাও অনেক বেশি।
শীতকালে
রোগ ভোগের হাত থেকে দূরে থাকতে হলে শীতের গরম পোষাক পরতে হবে। বাচ্চাদের
সুরক্ষিত রাখতে হবে গরম জামাকাপড়ে। মাথায় টুপি, পায়ে মোজা। ঠান্ডা গরম জলে স্নান
করানো, আইসক্রিম, কোক কিংবা ঠান্ডা পানীয় থেকে দূরে রাখতে হবে। সে ছোট হোক কিংবা
বড় হোক। মানুষকে সচেতন হতে হবে এসব ব্যাপারে।
শীতকালে
বৃষ্টি কম হয়, দূষণ বেশি ছড়ায় বিশেষ করে ইমারত দ্রব্য থেকে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে
মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শমত ওষুধ
খাওয়াটা খুবই জরুরী। এবিষয়ে ধ্যান দিলে শীতের রোগের হাত থেকে নিজেকে ও অন্যদের
রেহাই পাওয়া সম্ভব।
এক্ষেত্রে কি করা উচিত---
সর্দিকাশি হলে
সর্দিকাশি
হলে গরম ঠান্ডা জলে স্নান, গায়ে গরম জামাকাপড়, মুখে মাস্ক, বেশি করে জল খাওয়া,
মিউকোলাইটিক, সুদ্যিং কাশির সিরাপ খাওয়া যেতে পারে। তবে অনাব্শ্যক অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়া চলবে না।
জ্বর, গায়ে ব্যথা
জ্বর, গায়ে
ব্যথা হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ালেই চলবে। পারতপক্ষে যত কম ওষুধ দেওয়া যায়
ততটাই মঙ্গল। খুব দরকার না পড়লে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়াই ভালো।
গলায় ব্যথা
গলায় ব্যথা
কিংবা ঢোক গিলতে গেলে ব্যথা হল প্রদাহের জন্যই হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো
ভাইরাল সংক্রমণের জন্যই হয়। এসব ক্ষেত্রে গরমজলে নুন দিয়ে গারগিল করলে উপরকার হয়।
বেশি ব্যথা হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
হাঁচি বা কাশিতে
হাঁচি বা
কাশিতে বেশি করে জল খাওয়া, গরম জামাকাপড় পরে থাকা, উষ্ঞ জলে স্নান করা, হাঁচির
সময়ে রুমাল বা পরিষ্কার কাপড় মুখে দেওয়া নতুবা হাতের কনুই দিয়ে ঠেকানো যাতে করে
সংক্রমণ ড্রপলেটগুলো অন্যের কাছে ছড়িয়ে না যায়।
বাতের ব্যথায়
বাতের
ব্যথায় প্যারাসিটামল বড়ি দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়াই যথেষ্ট।
ভাইরাস জ্বরে
ভাইরাস
জ্বরে প্যারাসিটামল বড়ি, দুর্বলতার জন্যে ভিটামিন ডি ও পূর্ণ শারীরিক বিশ্রাম নিলেই
ঠিক হয়ে যায়।
হাঁপানী এক্ষেত্রে কি করা উচিত---
শ্বাস নিতে
কষ্ট হলে ব্রঙ্কোডাইলেট জাতীয় ওষুধ ও ইনহেলার ব্যবহার করলে উপকার হয়। অনাবশ্যক
অ্যান্টিবায়োটিকস প্রয়োগ করলে হাঁপানীর কষ্ট না কমে বরং বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
থাকে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। নিজে থেকে কোন ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়াই খুব জরুরী। নচেৎ বিপদ বাড়তে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন