বিশ্ব ব্রেন দিবস
২২ শে জুলাই বিশ্ব ব্রেন দিবস বা WORLD BRAIN DAY উদযাপন করা হয় সারা বিশ্ব জুড়ে। ব্রেনের গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই প্রতিবছর পালন করা হয় এইদিনটি। তবে জনমানুষ, প্রতিষ্ঠান বা সরকার কারো কাছে ব্রেন সমন্ধে সুস্পষ্ট কোন ধারণা নেই। যার জন্য ব্রেন নিয়ে খুব একটা চিন্তাভাবনাও করা হয় না। কিন্তু ব্রেন হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দেহের একটি জটিল আর রহস্যময় অঙ্গও বটে। যুগের পর যুগ ব্রেন নিয়ে গবেষণার পরও বিজ্ঞানীদের কাছে আজও এই অঙ্গটির অনেক কিছু অজানা রয়েছে।
সেইজন্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলোজি ১৯১৪
সালে তারা ঠিক করে যে ব্রেন সমন্ধে শুধু সাধারণ মানুষ নই, সর্বস্তরে মানুষ বিশেষ
করে সেইসব লোক যারা প্রতিষ্ঠান চালান, সরকার চালান, যারা পলিসি মেকার এদের মধ্যে ব্রেনের
গুরুত্ব বোঝানো দরকার। সেইজন্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলোজি এবং নিউরোলজি
নিয়ে কাজ করেন তার সহযোগী সংস্থা সকলে একসাথে মিলে ২২ জুলাই বিশ্ব ব্রেন দিবস
পালন করার সিদ্বান্ত নেয়।
এটা শুরু
হয় ২০১৪ সাল থেকে। প্রত্যেক বছরই একটি থিম থাকে ব্রেনের নানা অংশের সঙ্গে তার
গুরুত্ব কতটা, ব্রেনের অসুখ কেন হয় এবং সেটা কিভাবে ঠিক করা যায়, চিকিৎসার রূপরেখা ইত্যাদি বলে দেওয়া
হয়। এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলোজি চাইছে সাধারণ মানুষ অবগত হন ব্রেন এর
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্বন্ধে।
গতবারের
অর্থাৎ ২০১৭ সালের থিম ছিল – Stroke can be Prevented, Stroke can be Treated .২০১৮
সালের থিম হল CLEAN AIR FOR BRAIN
HEALTH.
আধুনিক
যুগে বায়ু দূষণ এক ভয়াবহ সমস্যারুপে দেখা দিয়েছে। এই বায়ু দূষণ মানুষের শরীরের
নানা অঙ্গের ক্ষতি করে। গ্রামের তুলনায় শহরে ভয়াবহ ভাবে বেড়ে চলেছে এই দূষণের
মাত্রা । দূষণ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা রকম রোগের সংখ্যাও। দূষণের ফলে
অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, স্মৃতিশক্তির সমস্যা, নার্ভের সমস্যা এমনকি ক্যান্সারের
মত সমস্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এইসব শহরভিত্তিক এলাকায়। এছাড়াও কথায় কথায় রেগে
যাওয়া, কাজে আগ্রহ কমে যাওয়া, ঝিমিয়ে যাওয়া-র মত সমস্যাও দেখা দেয়। বিশ্বব্যাপী
বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১২ মিলিয়ান মানুষের মৃত্যু হয়। যা নিঃসন্দেহে
উদ্বেগজনক।
ইদানিং
লক্ষ্য করা গেছে, যে স্ট্রোকের যতগুলি রিস্ক ফ্যাক্টার আছে তার মধ্যে বায়ু দূষণও
আছে। উন্নতশীল দেশ ভারতবর্ষেও এই দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। দিল্লী, কলকাতায়ও
ভয়াবহ বেড়ে চলেছে এই দূষণের মাত্রা। এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, এই সব
জায়গাগুলোতে প্রায় ৩০ শতাংশের উপরে স্ট্রোকের কারণ হচ্ছে ঐ বায়ু দূষণ। কেননা
আমাদের মত উন্নতশীল দেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এটা।
কমবয়সীদেরও ছাড় নেই। তাই এবিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেই প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানটা করা হয়।
তাই বায়ু
দূষণ সম্বন্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে। আর এটা শুরু করতে হবে নিজেকে দিয়েই। বাড়িতে
যাতে আমরা সুষ্ঠ স্বাভাবিক পরিবেশে থাকি সেটা আমাদেদর নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হবে
আর এটা যাতে নষ্ট না হয় সেটা দেখার দায়িত্বও আমাদের। গাড়ি থেকে অনার্গল কালো
ধোঁয়া বার হয়ে যাতে বায়ুকে দূষিত না করে সেবিষয়ে লক্ষ্য রাখা। অনেক সময় দেখা যায়
রাস্তায় গাছের পাতাগুলো জমিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে বায়ু মারাত্মক ভাবে
দূষিত হয়। তাই পাতাগুলোকে না পুড়িয়ে বায়োলজিক্যাল প্রসেস এ বিকম্পোস করা উচিত
এবং তাতে ঐ পাতাগুলো থেকে সার তৈরি হতে পারে। তাছাড়া শহরের মেয়র, চেয়ারম্যান,
কাউন্সিলার এবং তাদের যে কমিটি ও স্বাস্থ্য দপ্তরের উচিত শহরটা কিভাবে সুন্দর রাখা
যায় এবং দূষণমুক্ত রাখা যায় সে বিষয়ে তাঁদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।
সমস্যা
যাতে না বাড়ে সেইজন্য সারা বিশ্বে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলোজি নানাভাবে
সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সমাজের বিভিন্ন স্তরের
মানুষদের নিয়ে, স্বেচ্ছাসেবী সংঘটনের সাহায্য নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। বিভিন্ন
সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট, টুইটার, ফেসবুকের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেকটা স্তরের মানুষের
কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে যে পরিবেশ, বায়ু দূষণ করা বন্ধ করুন। কেননা শহরাঞ্চলের যে
দূষণ সেটা সম্পূর্ণভাবে মানুষেরই তৈরি করা দূষণ।
ব্রেন ভালো
রাখতে গেলে সবচেয়ে আগে দরকার পরিবেশটাকে ভালো রাখা। ২৪ ঘন্টায় কাজ করে চলেছে
আমাদের ব্রেন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে প্রতিনিয়ত। কত ধরনের কাজই
না করে এই ব্রেন।মানুষের হাঁটা, চলা, দৌড়ানো, কথা বলা, শোয়া, বসা, শরীরের
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হৃদস্পন্দন এর হার, শ্বাসকার্য এসব যেমন নিয়ন্ত্রণ
করে । তেমনি
দেখা, শোনা,স্বাদ, চিন্তা, চেতনা ও নানাধরণের আবেগ ইত্যাদি নানারকমের তথ্য গ্রহণ
করে সেগুলো বিশ্লেষণ করা। অর্থাৎ একটা মানুষের সারাদিনের যে কাজ তার সবটাই তো
কন্ট্রোল করে এই ব্রেন। এই কাজ সুষ্ঠ এবং স্বাভাবিক ভাবে চালানোর জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন-গ্লুকোজ এর। গ্লুকোজটা খাবারের মধ্যে থেকে আসে আর অক্সিজেনটা শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে থেকে আসে। আমাদের শরীরের ভরের ২% ওজন হল মস্তিষ্কের। অর্থাৎ একটা লোকের ওজন যদি ৭০ কেজি হয় তাহলে ১৪০০ গ্রাম। যা খুবই অল্প। কিন্তু তার অক্সিজেন চাহিদা অনেক বেশি। মস্তিষ্কে মোট ১০ বিলিয়ন স্নায়ুকোষ বা নিউরন থাকে। নিঃশ্বাস এর সাথে যতটুকু অক্সিজেন নেওয়া হয় তার মাত্র ২০% মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। অর্থাৎ শরীরের বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তুলনায় মস্তিষ্ক সব থেকে বেশি অক্সিজেন গ্রহন করে থাকে। এবং তা মস্তিষ্ক ব্যবহার করে থাকে। অক্সিজেনের মতো প্রায় ২০ ভাগ রক্তই মস্তিষ্ক আদান-প্রদান করে। এবং এইভাবেই, মস্তিষ্ক প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৩.৬ গ্লুকোজ গ্রহণ করে থাকে।
অতএব যে পরিবেশে থাকা হয় সেটা যদি দূষণমুক্ত পরিবেশ হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেটা ব্রেনের পক্ষে ভালো। আর দূষণযুক্ত পরিবেশে থাকলে ব্রেনের পক্ষে ঠিকমত অক্সিজেন পাওয়ার সমস্যা হয়ে যায়। তাই ব্রেনের জন্য অক্সিজেনএবং গ্লুকোজ সবসময় পাওয়া যাবে এইরকম একটা পরিবশে তৈরি করতে হবে। দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’।
আধুনিক নগরসভ্যতায় এটা ভাবা হয়তো কষ্টসষ্ট ব্যাপার। সম্প্রতি এক গবেষণায়ায় যুক্তরাজ্যের একদল গবেষকও নগরসভ্যতার বিপক্ষেই মত দিয়েছেন। ফলে আধুনিক নগরসভ্যতা থাকবে না আমরা থাকবো তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন আজ উঠেছে। তাই আসুন নিজের পাড়া থেকেই শুরুটা করা যেতে পারে। পাড়া থেকে এলাকা, এলাকা থেকে শহর -আমি, আপনি , আমরা সবাই মিলেই হাতে হাত মিলিয়েই গড়ে তুলতে পারি দূষণমুক্ত পরিবেশ তার জন্য চাই আমাদের সচেতনতা, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং কাজ করার প্রয়াস। যা দিতে পারে আমাদের ও আগামী প্রজন্মকে বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্রেন। অনুলিখনঃ ওসিউর রহমান, ৭৯৮০১৫৫২৭৭
Email- contact2rahaman1@gmail.com
No comments:
Post a Comment